দেশে জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিস বাংলাদেশ’ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন ।
তিনি বলেন, ‘কারা অধিদপ্তর নতুন উদ্যোগ নিয়ে কারাগারকে শুধু বন্দীদের আটকানোর স্থান হিসেবে নয়, বরং একটি সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বন্দীদের সেবার মান উন্নত করতে নানা পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে পুরান ঢাকার কারা সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘কারেকশন সার্ভিস অ্যাক্ট ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই কারাগারকে কেবল বন্দী রাখার স্থান হিসেবে না রেখে, একটি কারেকশনাল সার্ভিস (সংশোধনাগার) হিসেবে গড়ে তোলা হোক। এখানে আসা ব্যক্তি শুধু বন্দী হয়ে বের হবে না, বরং সংশোধিত মানুষ হিসেবে সমাজে ফিরবে।’
খসড়া আইনের মাধ্যমে কারা ব্যবস্থায় আধুনিকতা আনা হবে এবং এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পাশাপাশি ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দীদের জন্য নতুন দুটি কেন্দ্রীয় এবং চারটি জেলা কারাগার চালু করা হয়েছে। অধিক সমন্বয়ের জন্য ঢাকা বিভাগও দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আইজি প্রিজন্স আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে কারাগারগুলো জনবল সংকটে ভুগছে। সম্প্রতি সরকার ১ হাজার ৮৯৯ জন নতুন জনবল নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া আরও ১ হাজার ৫০০ জন নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন নিয়োগের ফলে কারাগারের ভেতরের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাজ আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, বন্দীদের খাবারের মান বৃদ্ধিতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। খাবারের মান উন্নয়নে নিয়মিত ও কঠোর মনিটরিং চালু রয়েছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ আরও স্বচ্ছ করতে ফোন ও সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্দীদের আদালতে আনা-নেওয়ার ঝামেলা কমাতে অনলাইনে ভার্চ্যুয়াল কোর্টে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ২০ ইয়ার্স রুল পুনরায় কার্যকর করা হয়েছে, যার ফলে অনেক বন্দী মুক্তি পেয়েছেন।
দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং বেশকিছু কর্মকর্তাকে শাস্তি ও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। শুধু বন্দীদের জন্য নয়, কারাগারে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষীদের জন্য আজীবন রেশন সুবিধা অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং পেশাগত উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি স্বচ্ছ, আধুনিক ও মানবিক কারা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কারাগারকে প্রকৃত অর্থে সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা বাস্তবায়নে কাজ করছি।’