জুলাই ডায়েরি: সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ‘বাংলা ব্লকেডের’ ডাক

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read
এদিন সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ‘বাংলা ব্লকেডের’ ডাক দেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস

সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ১০ জুলাই (বুধবার) আবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে এই কর্মসূচি পালন করবেন তারা। সড়ক ও রেলপথ এই কর্মসূচির আওতায় থাকবে।

আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ৯ জুলাই (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয়।

কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে এদিন মৌন মানববন্ধন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলনে কোটাব্যবস্থার সংস্কার ও সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ। দাবি আদায়ে ১০ জুলাই বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন তারা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ৯ জুলাই রাজধানীর বাইরে অন্তত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীরা সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এক দফা দাবি আদায়ে আগামীকাল (১০ জুলাই) সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালিত হবে। সারা দেশে আমাদের প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান থাকবে, সবাই সমন্বয় করে যার যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি করবেন। অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার জন্য লেন থাকবে। সাংবাদিকদের চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।’

বাংলা ব্লকেডের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, সকাল ১০টায় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে জমায়েত হবেন। তারপর তারা শাহবাগ মোড়ে যাবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত কর্মসূচি পালিত হবে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে সরকার পরিপত্র জারি করে। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে রিট করেন। ৫ জুন এই রিটের রায়ে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরিপত্র বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানির দিন ধার্য ছিল ৪ জুলাই। সেদিন শুনানি মুলতবি করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের পর থেকেই কোটা বাতিলের ওই পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তবে ১ জুলাই থেকে তাদের টানা আন্দোলন চলে। অন্য দাবির মধ্যে ছিল পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দাবি আদায় না হওয়ায় ৭ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচিতে এক দফা দাবির ঘোষণা দেওয়া হয়। সেটি হচ্ছে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে আইন করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার।

এই এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।

৯ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তারা নীতিনির্ধারক, শিক্ষক, আইনজ্ঞ ও অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই মনে করেন, সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে।

বুয়েটে মানববন্ধন
কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে এদিন দুপুরে মানববন্ধন হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। বুয়েটের শহীদ মিনারে ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন।

রাজধানীর বাইরে অবরোধ-বিক্ষোভ
সপ্তম দিনের মতো সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন মহাসড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যানজট সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিকেল পৌনে চারটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে রেললাইন অবরোধ করেন। এতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস আটকে যায়। অবশ্য আধা ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা টুকিটাকি চত্বর ও শহীদুল্লাহ্ কলাভবনের সামনে অবস্থান নেন। কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়কে শোডাউন করতে দেখা গেছে। এ দিন রাজশাহী কলেজের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে একাডেমিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে বরিশাল বিএম কলেজেও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা দুইটায় তারা অবরোধ তুলে নেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *