জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ৮২.৫% ভুগছেন বিষণ্নতায়

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read
২০২৪ সালের ১১ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ছবি: জান্নাতুল ফেরদাউস/টাইমস

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের ঘটনার পেরিয়েছে এক বছর। এই সময়ের মধ্যে দেশে নানা পরিবর্তন এসেছে, হয়েছে নানা সংস্কারও। কিন্তু এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশের জীবনে স্বাভাবিক ছন্দ ফেরেনি। গবেষণা বলছে, আহতদের ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছেন। এছাড়া তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপে ভুগছেন ৬৪ শতাংশ আহত।

সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) ‘বিয়ন্ড দ্য হেডলাইনস: মেন্টাল হেলথ কন্সিকোয়েন্সেস অফ দ্য জুলাই আপরাইজং অ্যান্ড মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করেছিল।

বিএমইউ এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান ‘মেন্টাল হেলথ ইম্প্যাক্ট অফ ভায়োলেন্স অ্যান্ড ট্রমা’ শীর্ষক উপস্থাপনায় জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে বিএমইউ, নিটোর এবং এনআইইউতে ভর্তি হওয়া ২১৭ জন রোগীর ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে। দেখা গেছে রোগীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছেন। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপে ভুগছেন ৬৪ শতাংশ। এদের মধ্যে অনেকই আবার বিষণ্ণতা ও তীব্র আঘাত পরবর্তী মানসিক চাপ দুটি সমস্যাতেই ভুগছেন।

তিনি বলেন, ‘আহতদের মধ্যে যারা গ্রামীণ এলাকার রোগী তারা নিজেদের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। তারা অধিকমাত্রায় উদ্বিগ্নও থাকেন। কারণ তাদের ধারণা, হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার পরে তারা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাবেন না।’

বিএমইউর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ উপস্থাপন করেন ‘ইম্প্যাক্ট অব ট্রমা অ্যান্ড ভায়োলেন্স এবং চাইল্ড অ্যান্ড এডোলোসেন্ট পপুলেশন’ শীর্ষক গবেষণা।

সেখানে তিনি দেখান, শৈশবের ট্রমা ও সহিংসতা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিলে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ ও আচরণগত সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এই চিকিৎসক মনে করেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা শিশুর মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন করেন, সাইকোলজিক্যাল ফাস্ট এইড দেন, প্রমাণভিত্তিক থেরাপি প্রয়োগ করেন, প্রয়োজনে ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা সমন্বয় করেন। সেইসঙ্গে পরিবার, শিক্ষক ও কমিউনিটিকে নিয়ে সমন্বিত সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। সহানুভূতিশীল পরিবার, সচেতন শিক্ষক এবং নিরাপদ সমাজ একসাথে কাজ করলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা তৈরি হয়।

অভিভাবক, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিশুর মানসিক কষ্ট বা পরিবর্তন লক্ষ করলে দেরি না করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। দ্রুত হস্তক্ষেপ মানে ভবিষ্যতের জটিলতা প্রতিরোধ। মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা শুধু চিকিৎসকই নয়, তারা শিশুদের জন্য সহায়ক, পথপ্রদর্শক এবং ভবিষ্যৎ রক্ষাকারী।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *