উচ্চ হারে সুদ দিয়েও ব্যাংকে গ্রাহকের আমানত জমা দেওয়ার হার তেমন বাড়ছে না। জুনের শেষেও আমানতে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের চেয়ে কম আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, জুনের শেষেও ব্যাংক খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মে মাসেও প্রবৃদ্ধির হার একই ছিল। তবে এর আগে এপ্রিলে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মার্চ মাসে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। এই দুই মাসে আমনতে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের বেশি ছিল।
এখন আমানতের বিপরীতে ৯ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে অনেক ব্যাংক। তারল্যসংকটে থাকা অনেক ব্যাংক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে আমানত নেওয়ার প্রচারণা চালালেও তাতে আশানুরূপ কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্যাংকার ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতিতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকের কাছেই মাস শেষে সঞ্চয় করার মত টাকা থাকছে না। আবার অনেকেই বেসামাল খরচ সামলাতে গিয়ে আগের সঞ্চয়ও ভেঙে ফেলছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতিও তারল্য প্রবাহ কমে যাওয়ার একটি মূখ্য কারণ বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরে জুনের শেষে ব্যাংকে মোট আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের একই মাসে ১৭ লাখ ৪২ কোটি টাকা ছিল। এই হিসাবে এক বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
আগের বছরই সেপ্টেম্বর থেকে আমানতে প্রবৃদ্ধি কমে ৭ দশমিক ২৬ শতাংশে নেমে যায়। এরপর থেকে এ হার ওঠানামা করছে ঠিকই। কিন্তু তা এখনও আর দুই অঙ্কের হয়নি।
অনেক অর্থনীতিবিদদের মতে, সামগ্রিক অর্থনীতির স্থবিরতার কারণেই প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে না। এখন আমানতে যেটুকু প্রবৃদ্ধি আছে, তাও মূলত দেশে রেমিটেন্সের ভালো প্রবাহের কারণে।
এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানান, বেকারত্ব বেড়ে মানুষের আয় কমে যাওয়া ছাড়াও নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য কমে যাওয়া ও বিনিয়োগে স্থবিরতার কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমছে। নতুন ব্যবসা না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যায়। এর প্রভাব কর্মসংস্থানে পড়ে বলেই বেকারত্ব বাড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুনে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ।
জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানুষের আয়ে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো চললেই চলতি আমানত বাড়ে। আর আয় যত ভালো থাকে ফিক্সড ডিপোজিট ততো বাড়ে। দেশের ৭ শতাংশের ওপর যে রেমিটেন্স হয়েছে তা রেমিটেন্সের জন্যই। সেই প্রবাহ না বাড়লে তাও হত না। অর্থনীতি ঘুরে না দাঁড়ালে আমানতের প্রবৃদ্ধির চাকাও গতিশীল হবে না।’