মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে তদন্ত চলমান থাকায় জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র স্পেশাল জজ ইব্রাহীম মিয়া এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে গত রোববার আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিম।
এতে বলা হয়, রংপুর-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত চলছে। দুদক জেনেছে, জিএম কাদের ও তার স্ত্রী সম্পদ হস্তান্তর করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন। এমন ঘটনা ঘটলে অভিযোগের অনুসন্ধান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তাদের বিদেশ গমন ঠেকানো দরকার।
কাদের দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন দিতে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকার ঘুষ নেয় জাতীয় পার্টি, যার মূল সুবিধাভোগী ছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এছাড়া, অর্থ ভাগাভাগির চুক্তি না মানায় মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার জায়গায় সাংসদ হন জি এম কাদেরের স্ত্রী শরীফা কাদের।
আরও বলা হয়, জি এম কাদের জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন এবং দলীয় পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন, যা পরে বিদেশে পাচার করা হয়।
পদ বাণিজ্যের প্রমাণ হিসেবে বলা হয়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট হলেও বর্তমানে এতে ৬০০ থেকে ৬৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, জি এম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ির মালিকানা দেখানো হয়। আর তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ির মালিকানা দেখানো হয়। এছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে এই দম্পতি লালমনিরহাট ও ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট থাকার তথ্য দেন।
১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জি এম কাদের। তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন-৪৫ এর সাংসদ ছিলেন। পরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন।