জাতীয় পার্টিতে (জাপা) ফের ভাঙনের ঢেউ দেখা দিয়েছে। সম্মেলন ঘিরে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে দ্বি-মত করছেন সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রুহুল গ্রুপকে সায় দিচ্ছেন রওশন এরশাদপন্থীরা। পাল্টাপাল্টি অবস্থানে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের গড়া দলটিতে বিরাজ করছে অচলাবস্থা।
এ অবস্থায় শনিবার দুপুরে জাপার কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের গুলশানের বাসায় উভয় পক্ষের সমঝোতা বৈঠক হয়েছে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রুহুল আমিন হাওলাদার শনিবার দুপুরে টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘শেষ বয়সে এসে জাতীয় পার্টি সবাইকে নিয়ে করতে চাই।’
তিনি জানান, ‘ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্ট’ গড়তে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাসায় সমঝোতা বৈঠকে মজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ অনেকে আছেন।
সাবেক এই মন্ত্রী দাবি করে বলেন, ‘রওশান এরশাদসহ সবাই “ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি” চান।’
তার মতে, জাপার আগামী চেয়ারম্যান হবেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
নির্বাচনকে সামনে রেখে জাপার কেন্দ্রীয় সম্মেলনে করতে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র অথবা তোপখানা রোডে পার্টি অফিসের সামনে ভেন্যুর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলেও জানান রহুল আমিন হাওলাদার।
জানা গেছে, জাপার সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম সভায় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পছন্দের ভেন্যু বরাদ্দ না পেয়ে সম্মেলনের তারিখ বাতিল করেছেন জিএম কাদের। তার একক সিদ্ধান্তে চটেছেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তারা নির্ধারিত তারিখে পার্টি অফিসের সামনে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এজন্য দলছুটদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন তারা। অচলাবস্থা নিরসনে সমঝোতার চেষ্টা করছেন চুন্নু।
জাপা মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘পার্টিতে কিছুটা অচল অবস্থা রয়েছে। এ অবস্থা নিরসনে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।’
তিনি জানান, গত ২০ মে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের সর্বশেষ বৈঠকে ২৮ জুন সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়। ভেন্যু চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে করার সিদ্ধান্তও হয়। তবে কোনো কারণে সেখানে সম্মেলন না করা গেলে ওইদিনই তোপখানায় পার্টি অফিসের সামনে রাস্তায় সম্মেলন করার দাবি জানান সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ও কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
এদিকে, জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘২৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার কর্মসূচি থাকায় কাউন্সিলের চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র সম্মেলনের ভেন্যু হিসেবে বরাদ্দ পাইনি। সেজন্য ২৮ তারিখের সম্মেলন স্থগিত। এখন কেউ যদি ভিন্ন ভেন্যুতে করে, সেটা তো জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবে না।’
জিএম কাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘এখনো আলোচনা চলছে। নতুন করে কেউ দল থেকে বের হয়ে যেতে চাইলে সেটা তার ব্যাপার।’
অন্যদিকে জাপার কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ টাইমস অব বাংলাদেশকে জানান, প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে দুটি ভেন্যু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। ভেন্যু নিয়ে জটিলতা হলে পুনরায় বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু জিএম কাদের এককভাবে সম্মেলনের তারিখ বাতিল ঘোষণা করেছেন, এটা ঠিক হয়নি। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা মেনে আগামি ২৮ জুন তোপখানায় পার্টি অফিসের সামনে সম্মেলন করা হবে।’
জাপা–রওশন এরশাদ অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি থেকে অতীতে যারা বের হয়ে গেছেন, যাদেরকে বহিস্কার করা হয়েছে সবাইকে এক ছাতার নিচে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২৮ জুনের কাউন্সিলর হবে ঐক্যের কাউন্সিল, ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গড়ার কাউন্সিল।’
জাতীয় পার্টির বনানীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে শনিবার সকাল থেকে নেতাকর্মীরা ভিড় রয়েছে, আছেন মহাসচিব চুন্নু। দুপুরে সেখানে যান জিএম কাদের। সেখানে থাকা নেতাকর্মীরা জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে নেতৃত্বে রাখতে চান।
তাদের একজন যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ বলেন, ‘জিএম কাদের ও চুন্নুর নেতৃত্বে সব জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। বাইরে কে কি করলেন, সেটা দেখার বিষয় নয়।’
অন্যদিকে কাকরাইলে জাপার প্রধান কার্যালয়ে বিরাজ করছে সুনশান নিরবতা। দুপুরে সেখান গেলে নিরাপত্তাকর্মী আসলাম মিয়া জানান, বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর নেতাকর্মীরা সেখানে যান। সম্মেলন বড় কোনো হলরুমে হবে বলে জানান তিনি।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারদের ঘনিষ্ট চট্রগ্রাম ও বরিশালের একাধিক নেতা দাবি করছেন, তাদের সঙ্গে দলের সাবেক ও বর্তমান সিনিয়র নেতাদের অনেকে আছেন। মহানগর, জেলা-উপজেলার অনেকে সঙ্গে আছেন বলে দাবি করছেন তারা।