জনসমক্ষে আসলেন খামেনি

3 Min Read
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তেহরানে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন, যা ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর তার প্রথম জনসম্মুখে উপস্থিতি। আশুরার আগের রাতে একটি শোক সভায় অংশ নেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

৮৫ বছর বয়সী খামেনিকে নিয়ে শনিবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, যেখানে তেহরানের একটি মসজিদে আশুরা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বহু মানুষ জড়ো হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে খামেনিকে মসজিদে প্রবেশের সময় জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে ও মাথা নেড়ে সাড়া দিতে দেখা যায়, এবং জনতা দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানায়।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দৃশ্য ইমাম খোমেনি মসজিদে ধারণ করা হয়েছে, যা তেহরানের কেন্দ্রে অবস্থিত।

১৩ জুন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে খামেনি জনসমক্ষে আসেননি, এবং তার সব বক্তৃতা ছিল পূর্বে রেকর্ড করা।

২২ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে তিনটি প্রধান পরমাণু স্থাপনায় বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েলের হামলায় অংশ নেয়। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ওয়াশিংটন জানে খামেনি কোথায় আছেন, তবে “এই মুহূর্তে অন্তত” তাকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা নেই।

২৬ জুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত একটি পূর্বে ধারণকৃত বক্তব্যে খামেনি ট্রাম্পের আত্মসমর্পণের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কাতারে একটি মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে তেহরান আমেরিকার মুখে ‘একটি চপেটাঘাত’ দিয়েছে।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দেখুন, আপনি একজন ধর্মবিশ্বাসী মানুষ। আপনার দেশে আপনি অত্যন্ত সম্মানিত। আপনাকে সত্য বলতে হবে -আপনি মার খেয়েছেন, বাজেভাবে।’

ইরান স্বীকার করেছে, যুদ্ধে তাদের ৯০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে ২৪ জুন।

এরপর ইরান নিশ্চিত করেছে, তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে গুরুতর ক্ষতি হয়েছে এবং জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিদর্শকদের সেখানে প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

পরিদর্শকরা সংঘাত চলাকালেও তেহরানে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।

ইসরায়েল ইরানের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়েছিল এবং দেশটির কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও শীর্ষ বিজ্ঞানীসহ বহু বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল।

তবে, বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে একটি আইন স্বাক্ষর করার পর সংস্থার পরিদর্শকরা দেশটি ত্যাগ করেন।

শুক্রবার সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি ইরানের সঙ্গে সংলাপ পুনরায় শুরু করে তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও যাচাই কার্যক্রম চালু করার ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা’ তুলে ধরেন।

ইসরায়েলের হামলার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল। ট্রাম্প ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ফের একটি চুক্তির চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি আলাদা এক বিবৃতিতে জানান, ইরান এখনো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির প্রতিশ্রুতিতে অটল রয়েছে এবং ইরান এই আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে -এমন ধারণা অমূলক।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *