চুয়াডাঙ্গায় টানা বৃষ্টির কারণে নিচু এলাকার গ্রামগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সবজি, আউশ ও আমন ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার লাউ, শসা, কাঁচামরিচ, ধনেপাতার খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় পেঁপে গাছ ও কলাবাগান ক্ষতির মুখে পড়েছে। এমনকি পানি জমে থাকায় ফুলকপি, পাতাকপিসহ শীতকালীন সবজির বীজতলা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।
চাষিদের দাবি, এই ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার ওপরে ছাড়িয়ে যাবে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় মোট ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা, ৯৮ হেক্টর আমন আবাদ, ১৩২ হেক্টর আউশ ধান, ১১০ হেক্টর মরিচ, ৩১২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি, ৫৭ হেক্টর কলা, ৩৭ হেক্টর পেঁপে, ১৩ হেক্টর চীনাবাদাম, ২০ হেক্টর পেয়ারা, ২১ হেক্টর মাল্টা ও ৩০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের হিসেবে পাট ও পানের কোনো ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই দুটি ফসলের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ শূন্য হেক্টর দেখানো হয়েছে। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রকৃতপক্ষে তাদের পান ও পাটক্ষেতেও ক্ষতি হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হিজলগাড়ি গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে আমরা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছি না। লাউ, শসা ও ধনেপাতার খেত ও ফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে এবার উৎপাদন অনেক কম হবে। আমাদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে।’
একই গ্রামের কৃষক খলিল হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে পেঁপে বাগান করেছিলাম। বৃষ্টির কারণে শেকড় আলগা হয়ে গেছে। এখন গাছ উপড়ে পড়ছে। পাশাপাশি দুই বিঘা জমিতে কাঁচামরিচ লাগানো হয়েছে। সেটিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির কারণে গাছে ফুল থাকছে না, পড়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে।
জুলাই মাসেও বৃষ্টির সঙ্গে মাঝে মাঝে ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে পেঁপে গাছের গোড়া উপড়ে বাগানের অনেক গাছ পড়ে গেছে। একই অবস্থা গ্রামের কলা বাগানগুলোতেও হয়েছে বলেও জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা গ্রামে ব্যাপক পরিমাণে পান চাষ হয়। কৃষক হাসেম আলী বলেন, ‘বৃষ্টির পানি জমে থাকায় পান গাছের গোড়া পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি ৭০-৮০ হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি। শুধু আমি একা না, গ্রামের সব পানচাষিই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের তুলনায় এ বছর জেলায় প্রায় ৫ গুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেখানে গত বছর জুলাইতে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৮৫ মিলিমিটার। সেখানে এ বছর জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪১৭ মিলিমিটার। পাশাপাশি এ বছর আগস্ট মাসের প্রথম আটদিনেই বৃষ্টি হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমনের খেতে আটকে থাকা পানি সরে গেলে সেখানে আমরা কৃষকদের চারা রোপণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। পানি সরে যেতে দেরি হলে নাবি জাতের চারা রোপণ করা যেতে পারে। বীজতলা না থাকলে এখনো করার সুযোগ রয়েছে। ওই জমিগুলোতে আগাম রবি শস্য চাষও করা যেতে পারে।’