চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র অভিহিত করে এটিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সমুদ্রবন্দরে রূপান্তরিত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি-৫) প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব উপেক্ষা করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু করা সম্ভব নয়। এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি এটিকে আরও শক্তিশালী করে তোলার ওপর জোর দিতে হবে।’
বন্দর সেরা না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও সেরা বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন মুহাম্মাদ ইউনূস।
দ্রুততার সঙ্গে বন্দরের সমস্যা সমাধানে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বলেন, ‘বন্দর পরিচালনার জন্য বিশ্বের সেরা অভিজ্ঞ কোম্পানি নিয়োগের জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার।’
‘বন্দরের সুবিধা বাড়লে বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবেন, এতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হবে’, বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এর আগে বুধবার সকালে প্রথমবারের মতো নিজ জেলা চট্টগ্রাম সফরে যান প্রধান উপদেষ্টা। প্রায় ১২ ঘণ্টার এই সফরে প্রধান উপদেষ্টার একাধিক কর্মসূচি রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফারিদা আখতার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে যান ড. ইউনূস। পরে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট নতুন সড়ক ও রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তিনি।
সেতুটিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেন, এই প্রকল্প শুরু হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট। আগামী তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত এই সেতুটি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার মানুষ বিশেষভাবে উপকৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা ও হাটহাজারী সড়কের (অক্সিজেন মোড় থেকে) যানজটসহ গুরুত্বপূর্ণ নগর সমস্যা নিয়ে কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টাকে ব্রিফ করবেন।
পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের জন্য জমির দলিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন।
এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূসের এবং সমাবর্তন ভাষণও দেবেন তিনি।
সেখানে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লেটারস (ডি.লিট.) উপাধিতে ভূষিত করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
চবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও নোবেলজয়ী ইউনূসের ক্যাম্পাসে এই ফিরে আসাকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সমাবর্তন শেষে তিনি যাবেন হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাতুয়া গ্রামে তার পৈতৃক বাড়িতে।