চট্টগ্রামে লুট হওয়া দেড় শতাধিক অস্ত্রের হদিস নেই

টাইমস রিপোর্ট
4 Min Read
বান্দরবানের রুমার দুর্গম পাহাড়ে সেনা অভিযানে উদ্ধার অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম। ফাইল ফটো, টাইমস
Highlights
  • ‘নগরের অপরাধচক্র তাদের কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য নানা প্রক্রিয়ায় অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। অস্ত্র উদ্ধারে কুইক রেসপন্স টিম ও আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে নিখোঁজ অস্ত্রগুলো কার কাছে বা কোথায় আছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।’

গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর চট্টগ্রামে পুলিশের কাছে থেকে লুট হওয়া ১৫৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। অপরাধীদের মাধ্যমে এসব অস্ত্র সারাদেশে ছড়িয়ে গেছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

সিএমপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র টাইমস অব বাংলাদেশকে জানিয়েছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর চট্টগ্রামের ১৮ থানা, ফাঁড়ি, বক্সসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় লুট করা হয় ৯৪৮টি অস্ত্র। এর মধ্যে ৭৯৩ অস্ত্র উদ্ধার করা গেলেও ১৫৫টি এখনও নিখোঁজ।

সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘নগরের অপরাধচক্র তাদের কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য নানা প্রক্রিয়ায় অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। অস্ত্র উদ্ধারে কুইক রেসপন্স টিম ও আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে নিখোঁজ অস্ত্রগুলো কার কাছে বা কোথায় আছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।’

আসন্ন নির্বাচনের আগেই সব অস্ত্র উদ্ধারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগরীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সচেতন নাগরিকরা।

সিএমপির তথ্য অনুযায়ী, লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টুয়েলভ বোর শটগান ৪১৪ টি। এছাড়া চায়না রাইফেল ১০৫ টি, চায়না এসএমজি-টি ৬২ টি, চায়না এলএমজি-টি একটি, চায়না পিস্তল ৪৫ টি, নাইন এমএম পিস্তল ১১০ টি, নাইন এমএম এসএমটি তিনটি, সিঙ্গেল শট গ্যাস গান ২০৩ টি ও টিয়ারগ্যাস লঞ্চার পাঁচটি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো হলো, ৮৭ টি চায়না রাইফেল, ৩৫৯টি টুয়েলভ বোর শটগান, ৬৮টি নাইন এমএম পিস্তল, ১৮৯ টি গ্যাসগান, ৫৪ টি এসএমজি-টি, চায়না পিস্তল ২৯ টি, এসএমটি তিনটি, এলএমজি-টি একটি এবং টিয়ার গ্যাস লঞ্চার তিনটি।

নিখোঁজ তালিকায় থাকা অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সিএমপির কর্মকর্তারা বলছেন, শটগান ও পিস্তল সবচেয়ে বিপজ্জনক, কারণ এগুলো সহজে লুকানো যায় এবং অপরাধে ব্যবহারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অপরাধীরা এসব অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি, সন্ত্রাসী হামলা বা রাজনৈতিক সহিংসতা চালাতে পারে।

নিখোঁজ অস্ত্রগুলো স্থানীয় অপরাধীচক্র ও রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও ধারণা তাদের।

চট্টগ্রামের বাইরে থেকে অস্ত্র উদ্ধার

সিএমপির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৮ আগস্ট বাগেরহাটের মোংলা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেতা কামাল হাওলাদার। তার কাছ থেকে ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। এসব গুলি চট্টগ্রামের থানা থেকে লুট হয়েছিল।

এর আগে গত ২০ মার্চ চাঁদপুর জেলা পুলিশের কনস্টেবল রিয়াদসহ ছয়জনকে অস্ত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, রিয়াদ একটি অপরাধস্থল থেকে উদ্ধার করা পিস্তল বিক্রিতে সহায়তা করছিলেন।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন অপরাধীদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র

গত ২৯ আগস্ট কুয়াইশ এলাকায় মাসুদ কায়সার ও মো. আনিসকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় উদ্ধার হওয়া কার্তুজ লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ছিল বলে নিশ্চিত করে পুলিশ। ২১ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে ইসমাইল হোসেন ও শহিদুল ইসলামের বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির পর বহদ্দারহাটে শহিদুলের আস্তানায় লুট হওয়া অস্ত্রের গুলির খোসা পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এর আগে, গত ৩ মার্চ সাতকানিয়ায় দলবদ্ধ পিটুনিতে দুইজন নিহতের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া পিস্তলটিও লুটের অস্ত্র বলে জানায় সিএমপি। এ ছাড়া ডবলমুরিং ও পতেঙ্গা এলাকায় অভিযানে একাধিক লুট হওয়া পিস্তল, গুলি ও গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘পুলিশের কাছে ভিডিও ফুটেজ ও তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিরাও অনেক তথ্য দিয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার না হলে আগামী নির্বাচনে জানমালের নিরাপত্তা শঙ্কা বাড়বে।’

কেবল ৪ ও ৫ আগস্টে লুট হওয়া অস্ত্রই নয়, ভীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে যেকোনো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানো জরুরি বলেও মনে করেন আখতার কবির।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *