জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবে ফের ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের দাবি, ওই আহ্বানে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রতি যথেষ্ট নিন্দা জানানো হয়নি।
জাতিসংঘের সবচেয়ে শক্তিশালী শাখার বাকি ১৪ স্থায়ী সদস্য ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। প্রস্তাবে বাস্তুচ্যুত ২১ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য মানবিক সহায়তা পাঠানোর ওপর সব ধরনের ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মানসুর বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ যারা এই অধিবেশন দেখছিল, তারা হয়তো ভেবেছিল কিছুটা স্বস্তি আসবে, কিন্তু তা হয়নি। তাদের ক্ষোভ ও হতাশা আমি বুঝতে পারি।’
প্রস্তাবের অন্যতম নেতা আলজেরিয়া জাতিসংঘে ব্যর্থতার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ফিলিস্তিনিদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার বেনজামা বলেন, ‘এই পরিষদের ১৪ জন সাহসী সদস্য তাদের আওয়াজ তুলেছেন। তারা বিবেক দিয়ে কাজ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক জনমতের সঙ্গে থেকেছেন।’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোকে নিরাপত্তা পরিষদের ‘অন্ধকার মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘এই প্রস্তাবে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করবে না, নিরাপত্তাও আনবে না। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে এবং নাগরিকদের রক্ষা করবে। নিরাপত্তা পরিষদ “সন্ত্রাসবাদের” পক্ষে ভোট দিলেও ইসরায়েল থামবে না।’

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মার্কিন নীতিনির্ধারক মর্গান ওরটাগাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা কারও কাছে বিস্ময়কর হওয়ার কথা নয়। এই প্রস্তাবে হামাসকে নিন্দা জানানো হয়নি, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকার করা হয়নি এবং হামাসের পক্ষে মিথ্যা বর্ণনাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই পরিষদে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিষদের অন্য সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে প্রস্তাবে এমন ভাষা ব্যবহার করেছে যা “অগ্রহণযোগ্য” এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ভেটো আদায়ের জন্য তৈরি। এই ভেটোর পেছনে তাদের দায় রয়েছে।’
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়, গত নভেম্বর থেকেই গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রমাণ মেলার পরেও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো আবারও প্রমাণ করল গাজায় চলমান ‘গণহত্যায়’ সম্মতি দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বিশ্বমঞ্চে একা হয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে গাজায় যুদ্ধবন্ধ ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে বড় পরিসরের আলোচনা হতে পারে বলে মোট দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এমন পরিস্থিতিতে ব্রিটেনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। তবে সেখানেও আপত্তি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাজেই প্রতীকী হলেও ট্রাম্প এবং তার মিত্র বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘে বিশ্ব নেতাদের সামনে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন।