সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে দুবার স্থান বদলের পর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচি পালন করেছেন সুন্নি মুসলমানরা। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকায় এ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।
শনিবার ভোরে ফজরের নামাজের পর থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন সুন্নিপন্থী ছাত্র-জনতা। এ সময় তাদের হাতে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা, কালেমা খচিত পতাকা, গায়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে নানা রকমের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্রেসক্লাব ছাড়াও পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা।
আয়োজকরা জানান, কর্মসূচিতে দেশের শতাধিক দরবারের পীর-মাশায়েক এবং তাদের প্রতিনিধি-ভক্ত ও সুন্নি মুসলমানরা অংশ নেন।
বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ‘ম্যাস গেদারিং ফর ফিলিস্তিন’ কর্মসূচি পালনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ডেকেছিল। কিন্তু সরকারের অনুমতি পাননি তারা। পরে তারা গোপিবাগ মাঠে কর্মসূচি করতে চান। শুক্রবার গভীর রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি মেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বল্প সময়ের জন্য সমাবেশ করার। এ অবস্থায় শনিবার সকালেই ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চ’র ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন,যতদিন প্রাণ থাকবে, ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে কথা বলা আমরা বন্ধ করবো না। মজলুম মুসলমানদের ওপর ইসরায়েলের চরম বর্বরতা ও নৃশংসতা আর সহ্য করা যায় না। ইসরায়েলের এ বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা বলেন, পতিত সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্যবসা করেছে, কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান করেনি। তবে মুহাম্মদ ইউনূস তার আন্তর্জাতিক অবস্থান কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্মভূমিতে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য তাকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
মাজারে হামলা প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে দেশে অসংখ্য মাজারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যা সুস্পষ্টভাবে জুলুম ও অমানবিক। ভবিষ্যতে যদি কোনো মাজারে হামলা হয়, তাহলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিরোধ করা হবে।
সমাবেশ থেকে ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে- জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের যত কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সকল কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে যত হত্যা হয়েছে সকল হত্যাকাণ্ড ও হামলার তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ইন্ডিয়ার লোকসভায় পাস হওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল বাতিল ঘোষণা করতে হবে। ৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজারে যত হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে সবগুলো ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশ থেকে তিনটি অঙ্গীকার করা হয়। সেগুলো হলো- ইসরায়েল ও ইন্ডিয়াসহ সকল প্রকার বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা জারি রাখা, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগসহ সকল প্রকার দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখা এবং বাংলাদেশের মুসলমানদের স্বার্থে যেকোনো সময় ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার করেন সমাবেশে আগতরা।