দেশের গণমাধ্যম সংস্কারে ২০টি সুপারিশমালা তৈরি করেছে কমিশন। তা জমা পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদের নেতৃত্বে অন্যান্য সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কার এগিয়ে নিতে কয়েকটি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
সাংবাদিক কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে সদস্য সংখ্যা ৯। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি দ্য ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) এর প্রতিনিধি সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক জিমি আমির, দ্য ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের কাছে জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের নিরাপত্তা হুমকি আসে। এসব থেকে সুরক্ষা দেবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। প্রয়োজনে আইন করে তাদের সুরক্ষা দেবার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে গণমাধ্যম সংস্কারে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে।”
প্রতিবেদনের বিস্তারিত না জানালেও কমিশন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার জন্য বর্তমানে সচল ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ এবং সম্প্রচারমাধ্যম ও অনলাইনের জন্য বিগত সরকারের প্রস্তাবিত ‘সম্প্রচার কমিশন’-এর সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ গণমাধ্যম কমিশন’ গঠন করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।
কামাল আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমে কালো টাকা ঢুকেছে। রাজনৈতিক পরিচয় ও অন্ধকারে রেখেই গণমাধ্যমের মালিকানা দেওয়া হয়েছে। সব কয়টি টেলিভিশনের আবেদনে দেখা গেছে জনস্বার্থ কোনোটিতেই ছিল না। সবগুলোই রাজনৈতিক পরিচয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান একটি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে, এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাসসকে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার সাথে একীভূত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা তৈরি করতে হবে। এই সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন তৈরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সেই আইনের খসড়াও তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সরকারের হিসাবে ৬০০ পত্রিকা রয়েছে যারা সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, কিন্তু বাস্তবে প্রকাশিত বিক্রিত পত্রিকার সংখ্যা মাত্র ৫২টি। প্রতারণা করে সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকদের বেতন বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। বিসিএস ক্যাডারদের এন্ট্রি ৯ম গ্রেডের যে বেতন, সাংবাদিকতা শুরুর বেতন তার সঙ্গে মিল রেখে যেন করা হয় প্রতিবেদনে সেই সুপারিশ করা হয়েছে। এটা সারা দেশেই নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ঢাকায় এর পাশাপাশি ‘ঢাকা ভাতা’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাংবাদিকতা করতে হলে ন্যূনতম স্নাতক পাসের যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রথমে ‘শিক্ষানবিশ সাংবাদিক’ হিসেবে কাজ করতে হবে। শিক্ষানবিশ হিসেবে এক বছর কাজ করতে হবে। এরপর প্রমোশন পাবে।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের ছয়টি খাত সংস্কারে যে কমিশন গঠন করেছিল গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তারই একটি। তাদের সুপারিশ জমার মাধ্যমে সংস্কার কাজের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব সুপারিশের আলোকে আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেবে সরকার।