গণঅভ্যুত্থানে পা হারানো আরাফাতের দুর্বিষহ জীবন

টাইমস ন্যাশনাল
2 Min Read
জুলাই গণ অভ্যুত্থানে পা হারানো আরাফাত। পাবনার নিজ বাড়িতে তোলা। ছবি: টাইমস

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে এক পা হারান পাবনার আরাফাত হোসেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর খুশি হলেও, তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এক পা নিয়েই তাকে নামতে হয়েছে জীবন যুদ্ধে। দেশের জন্য আরাফাতের পা হারানো নিয়ে গর্ব থাকলেও, ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশেহারা পরিবার।

যে পা দিয়ে গাড়ির ব্রেক চেপে অন্যদের রাখতেন নিরাপদ, সেই পা দু’টির একটি হারিয়েছেন। থমকে গেছে তার জীবনের গতি।

পাবনা সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও কোমেলা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে চতুর্থ আরাফাত হোসেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এক ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকার চালক হিসেবে চাকরি নেন ঢাকার উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে। ১৮ জুলাই সকাল নয়টার দিকে আন্দোলনরত ছাত্ররা উত্তরার প্রধান সড়কে জমায়েত হয়। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সেই আন্দোলনে ছুটে যান আরাফাত।

টাইমস অব বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে আরাফাত বলেন, ‘সারাদিন থেমে থেমে আন্দোলন চলে। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। পরে দৌঁড়াতে গিয়ে দেখি আমার বাম পা ওঠে না। তাকিয়ে দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে পা আর রাজপথ।’

আন্দোলনরত ছাত্রদের সহযোগিতায় আরাফাতকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা যায়নি গুলিবিদ্ধ বাম পা। পরে চিকিৎসক জানান, পা কেটে বাদ দিতে হবে।

বাড়ি ফিরে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় একটি মুদিখানা দোকান দিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন আরাফাত। ভেবেছিলেন বাবা-মা, ভাইবোনসহ পুরো পরিবারের দায়িত্ব সামলাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন তার কাছে দুঃস্বপ্ন।

ছেলের এমন পরিণতিতে আক্ষেপের শেষ নেই বাবা-মার। আর দেশের জন্য স্বামী পা হারালেও ভবিষ্যৎ চিন্তায় দিশেহারা আরাফাতের স্ত্রী।

আরাফাতের বাবা কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সামান্য কিছু জমি আছে, কিছু চাষাবাদ করি। বয়স হয়ে গেছে। আগের মতো কাজকামও করতে পারি না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পাবনা জেলা শাখার আহ্বায়ক বরকতউল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশের বিজয়ের পেছনে আহত জুলাই যোদ্ধাদের অবদান কোনো অংশে কম নয়। আমরা সবসময় তাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকবো।’

পাবনার জেলা প্রশাসক মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাতহতদের তালিকা ও তাদের সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাবনার হতাহত পরিবারগুলোর মাঝে এক কোটি ৭৩ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *