২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২১ লাখ মানুষ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এর জরিপে বলা হয়, চাকরি হারানোদের মধ্যে ১৮ লাখই নারী, যা নতুন করে বেকারত্বের শিকারদের প্রায় ৮৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে তিন লাখ ৩০ হাজারের বেশি। বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়, ২০২৩ সালের শেষার্ধে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ লাখ। সরকার পতন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০২৪ সালে এ সংখ্যা ২৭ লাখ ছাড়িয়েছে।
তবে সরকারি এই হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকরা। তাদের ধারণা, সরকার যে হিসাব দিয়েছে বেকারত্বের প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২২ সাল থেকেই দেশের ব্যাংক খাত থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার পরিস্থিতিসহ অর্থনৈতিক সূচকগুলো খুবই দুর্বল অবস্থানে ছিল। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ধকল এসেছে কর্মসংস্থানের ওপর। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেকারত্বের হারে বড় ধরনের অবনমন ঘটেছে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন তৈরি হয়নি তেমনি বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মোট কর্মসংস্থানও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।’
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার বছর পেরোলেও কোন কোন খাত সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হারিয়েছে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়নি বিবিএস। ফলে প্রকৃত বেকারত্বের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
এদিকে বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী বিবিসিকে জানান, গত এক বছরে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিও তুলনামূলক কম ছিল। বছর পার হলে চাকরি যুদ্ধে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্ত হচ্ছে। এতে চাকরির প্রতিযোগিতায়ও অনেকে পিছিয়ে পড়ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব আনইমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস (অডিপ) এর আহ্বায়ক জিনাত আরা আফরোজ জানান, কেবল ইউএসএইডের ফান্ড স্থগিত হওয়ার কারণেই বিভিন্ন এনজিও’র সঙ্গে জড়িত ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ‘তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও চাকরি খুঁজে পাননি। আবার কেউ হয়তো পেশা পরিবর্তন করেছেন’, যোগ করেন জিনাত আরা।
বাংলাদেশে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের অন্যতম কর্মসংস্থান গার্মেন্টস সেক্টরেও বেকার হয়েছেন বিপুল মানুষ। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগ ও অস্থিরতায় বন্ধ হয়ে গেছে শত শত শিল্প – কারখানা। শিল্পাঞ্চল পুলিশের আটটি অঞ্চলের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে অন্তত দুইশ গার্মেন্টস বন্ধ হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা তিনশ’র বেশি।