বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন থেকে দোহায় যাত্রা বিরতি শেষে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার সকালে দলের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে, তাকে স্বাগত জানাতে হাজার হাজার বিএনপির নেতাকর্মী সকাল থেকে কুর্মিটোলার বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হয়েছেন। তারা সুশৃংখলভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দলীয় ও জাতীয় পতাকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। বিএনপি নেত্রীকে স্বাগত জানাতে এরই মধ্যে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির শীর্ষ নেতারা।
নগরীর ভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী জড়ো হচ্ছেন বিমানবন্দর থেকে গুলশান–খালেদা জিয়ার ঢাকায় আগমনের পথে, সড়কের দুইপাশে। পথে পথে খালেদা জিয়াকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ তাদের। গাড়িতেই বিএনপি নেত্রীকে এক ঝলক দেখার জন্য বাসনা তাদের। তবে এসএসসি পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে সড়কে ভিড় না করে ফুটপাতে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে দলীয়ভাবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।
দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে রয়েছেন দুই পুত্রবধূ—জোবায়দা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান। কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিট) লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। বিমানটি দোহায় যাত্রাবিরতির পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

হিথ্রো বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন তিনি। গাড়িতে দাদির সঙ্গে ছিলেন তারেকের মেয়ে জাইমা রহমানও। বিদায়লগ্নে সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাজারো প্রবাসী নেতা-কর্মী। তারা ফুলের তোড়া, ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের জন্য কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—তারা জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে ফুটপাতে অবস্থান করবেন, কোনোভাবেই গাড়ির পেছনে হেঁটে বা মোটরসাইকেলে বহর নিয়ে যাওয়া যাবে না। বিমানবন্দর ও গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’-তে কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। এ ছাড়া ধানমন্ডির ‘মাহবুব ভবন’-এ তারেকপত্নী জোবায়দা রহমানের বাবার বাড়িতেও বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রায় ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন জোবায়দা রহমান। বাংলাদেশে তার অবস্থানকালে ‘ভিআইপি নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করা হয়েছে বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-বনানী-বিমানবন্দর সড়কে নেতাকর্মীরা যেন ফুটপাতে থাকেন। ব্যাগ, লাঠি বহন না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ থাকবে, নির্ধারিত গতিসীমা ও লেনে চলতে হবে। বিমানবন্দরমুখী যাত্রীদের—বিশেষ করে হজযাত্রী ও পরীক্ষার্থীদের—পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ট্রেন থামার সময় বাড়ানো হয়েছে, বাড়তি শাটল ট্রেন চালানো হচ্ছে।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডনে যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হৃদ্রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।