জুলাই অভুত্থানের পর নতুন অবহে হতে যাচ্ছে এবারের কোববানির ঈদ, ঈদুল আযহা। আর ঈদ উপলক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বাজারে ছেড়েছে কিছু নোট। এসব নোটে উঠে এসেছে দেশের ঐতিহাসিক প্রত্মত্বাত্ত্বিক পুরাকীর্তীর চিত্র, প্রাধান্য পাচ্ছে জুলাই অভুত্থানের চেতনা। বাদ পড়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি।
নতুন নোটগুলোর মধ্যে ২০ টাকার নোটে তুলে ধরা হয়েছে দিনাজপুরের প্রাচীন কান্তজীউ মন্দির। দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলা স্থাপত্য শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন, অপূর্ব কারুকার্যময় এই প্রত্মসম্পদ আবারো নতুন করে এসেছে আলোচনায়।
কান্তজীউ মন্দিরের ইতিহাস
ইতিহাস বলছে, দিনাজপুরের কান্তজীউ মন্দির কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ঢেপা নদীর তীরে অবস্থিত। টেরাকাটা অলঙ্কারের বৈচিত্র্যে এবং ইন্দো-পারস্য স্থাপনা কৌশল অবলম্বনে মন্দিরটি নির্মিত। শ্রীকৃষ্ণের যুদ্ধ-বিগ্রহ অধিষ্ঠানের জন্য এই মন্দির নির্মিত হয়। মন্দিরটির অবস্থান শ্যামগড় এলাকায় হলেও বিগ্রহের নাম অনুসারে এর নতুন নাম দেয়া হয় কান্তনগর।
মন্দিরের উত্তরের ভিত্তিবেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, মহারাজা প্রাণনাথের (মৃত্যু ১৭২২ খ্রি.) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭০৪ খ্রি. থেকে মন্দিরটি নির্মাণ শুরু হয়। তার নির্দেশ মতে মহারাজার দত্তক পুত্র রাজ রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রি. এর নির্মাণ কাজ শেষ করেন।
মন্দিরের বৈশিষ্ট
প্রায় এক মিটার উঁচু এবং ১৮ মিটার বাহুবিশিষ্ট বর্গকার বেদীর উপর এ মন্দির নির্মিত। ইটের তৈরী মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬ মিটার । তেতলা বিশিষ্ট এ মন্দিরের নয়টি চূড়া রয়েছে। এজন্য এটাকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়। শুরুতে কান্তজিউ মন্দিরের উচ্চতাছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালে কান্তজিউ মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। পরে রাজা গিরিজনাথ মন্দিরের সংস্কার করলেও এর চূড়াগুলো আর নির্মাণ করা হয়নি। মন্দিরের প্রাঙ্গন আয়াতকার হলেও পাথরের ভিত্তির উপর দাড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। এর পরিমাপ ১৯.২০x১৯.২০ বর্গামিটার। মন্দিরটি ১৫.৮৪x১৫.৮৪ বর্গমিটার আয়তনের একটি বর্গাকার ইমারত। প্রতিটি তলার চারপাশে বারান্দা রয়েছে।
মন্দিরের টেরাকোটা চিত্রে রামায়ণ ও মহাভারতের ঘটনা সম্বলিত চিত্র ও মুঘল আমলের বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্দিরের পশ্চিম দিকে দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। এর নিচ তলায় ২৪ টি, দ্বিতীয় তলায় ২০ টি এবং তৃতীয় তলায় ১২ টি দরজা রয়েছে।
গুণীজনের মত
ধারণা করা হয়, কান্তজিউ মন্দির নির্মানে ব্যবহৃত পাথর আনা হয় হিমালয়, আসামের পার্বত্যাঞ্চল ও বিহারের রাজ মহল পাহাড় থেকে। ইট-বালি টেরাকোটা ও কঠিন পাথরের সংমিশ্রনে এটি তৈরী করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক বুকানন হ্যামিলটনের মতে, কান্তজিউ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম মন্দির। মন্দিরটি দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এস্টেটের একটি অংশ। দেবোত্তর এস্টেট বর্তমানে মন্দিরটি দেখাশোনা করে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মন্দিরটি দেখাশোনায় সহযোগিতা করে থাকে। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর সহায়তায় মন্দিরটির সামগ্রিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।