নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২৪ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
দফাগুলোর মধ্যে রয়েছে, নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই অভ্যূত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার, সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গ্রাম পার্লামেন্ট ও পানীয় সরকার, স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, সার্বজনীন স্বাস্থ্য, জাতিগঠনে শিক্ষানীতি; গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব; ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্বার মর্যাদা; নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন, মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি, তারুণ্য ও কর্মসংস্থান, বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি, টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা, জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও অধিকার, বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।
ইশতেহারে প্রতিটি দফা সম্পর্কে কিছুটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ, দফাগুলোর অধীনে কী করা হবে, কীভাবে গড়ে তোলা হবে নতুন বাংলাদেশ তার একটি রূপরেখা আলোচনা করা হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উৎপাটনে আপনাদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা আপনাদের, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পাটি (এনসিপি) গঠন করেছি।
‘গত এক বছরে আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, রাষ্ট্রের মৌলিক ও কাঠামোগত সংস্কারে বিভিন্ন শক্তিশালী পক্ষের বিরোধিতার মুখেও এনসিপি আপনাদের পক্ষ থকে মৌলিক সংস্কারের জন্যে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এই মৌলিক সংস্কারগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন ছাড়া ফ্যাসিবাদী কাঠামো ভেঙে ফেলে আমাদের ২৪ এর গণ-অভ্যূত্থান গণতান্ত্রিক বিপ্লবে রূপান্তরিত হবে না।’
ইশতেহারের প্রথম দফাটি হলো নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক। যেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নতুন যাত্রায়, আমাদের প্রথম অঙ্গীকারই হচ্ছে গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান। এই সংবিধান, একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ
করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভূক্তিমলক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করবে। যেখানে রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবন, জীবিকা, মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করবে।
দ্বিতীয় দফায় রয়েছে জুলাই অভ্যূত্থানের স্বীকৃতি ও গণহত্যার বিচারের বিষয়টি।
পাশাপাশি শাপলা চত্বরে গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করবে এনসিপি।
তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের কথা।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা এমন একটি ইনসাফের রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পক্ষপাতহীন, মানবিক ও গণুমখী। জনসেবাই হবে তাদের মূলমন্ত্র। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ জবাবদিহিতা নিশ্চিতকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে, যেন এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারে। আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে জনগণ শুধু নিবাচনের দিন সকল ক্ষমতার উৎস হবেনা, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষত্রে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।‘
ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার রয়েছে চতুর্থ দফায়।
সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রের স্বাধীন বিচারবিভাগ ক্ষমতাবানদের পক্ষে অন্ধ অবস্থান নেবে না, বরং মজলুমকে তার প্রাপ্য ন্যায়বিচার বুঝিয়ে দেবে।
পঞ্চম দফায় রয়েছে সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন প্রসঙ্গ। যেখানে প্রশাসনে সব ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। নিয়োগ, বদলী, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকেই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে ধরার কথাও বলা হয়েছে।
ষষ্ঠ দফায় রয়েছে জনবান্ধব আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের প্রত্যয়। ঔপনিবেশিক আমলের ১৮৬১ ও ১৮৯৮ সালের পুলিশ আইনকে যুগোপযোগী করা, মানবিক পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার প্রসঙ্গ এসেছে সপ্তম দফায়। এনসিপি বলছে, তারা গ্রামের স্বকীয়তা অক্ষুণ্ণ রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে চায়। স্থানীয় পর্যায়ে শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গ্রাম পার্লামেন্ট গঠন, তাদের হাতে স্থানীয় সমস্যার সমাধান, স্থানীয় উন্নয়ন তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হবে।
স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজের কথা বলা হয়েছে অষ্টম দফায়।
সেখানে বলা হয়েছে, এনসিপি সংবাদমাধ্যমের শতভাগ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। এজন্য প্রেস কাউন্সিলকে কার্যকর করা হবে। এছাড়া নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা করপোরেশনের কাছে যাতে বহু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কুক্ষিগত না থাকে, গণমাধ্যম যেন রাজনৈতিক দলের স্বার্থের হাতিয়ার না হয় তা তদারকি করা হবে।
এনসিপির পুরো ইশতেহার দেখুন এখানে : NCP_Manifesto_final_tob