বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ পাঁচজনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে তাদেরই সহযোদ্ধা উমামা ফাতেমা। তিনি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে।
পোস্টে উমামা ফাতেমা লেখেন, ‘আজকের এই চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে।’
‘ইশ! মানুষ কত নিঃষ্পাপ! সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো তারা আবিষ্কার করেছেন এই ছেলেগুলো আজ কিভাবে চাঁদাবাজি করল?! অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধুরা, বলতে হবে এই প্রথম কোনো চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তারা পুলিশের হাতে ধরা খেল। ঠিকমতো খোঁজ নিলে বুঝবেন, এদের শেকড় অনেক গভীরে।’
শনিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আটক পাঁচজনের ছবিসহ পোস্টটি দেন উমামা। গত বছর জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে উমামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সংগঠনের মুখপাত্র হন। গত মাসে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়েন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগ নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিলেও উমামা সে দলে যাননি।

শনিবার চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পাঁচ নেতা। রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা চাইতে গেলে গুলশান থানা পুলিশ তাদের আটক করে। প্রথম দফায় ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় আরও অর্থ নিতে গেলে শনিবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করা হয়।
এরই মধ্যে অভিযুক্ত পাঁচ নেতাকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিজের ফেসবুক পোস্টে উমামা বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজনের চাঁদাবাজির খবর শুনে আমার পরিচিত অনেকেই এতটাই ‘আশ্চর্য’ হয়েছেন দেখে মনে হচ্ছে এতে আমিই সবচেয়ে কম ‘আশ্চর্য’ হয়েছি। এই ছেলেগুলোকে তো এতদিন নেতাদের পেছনে প্রটোকল দিতে দেখা গেছে। এরাই সমন্বয়কদের ডানহাত-বামহাত হিসেবে পরিচিত। সচিবালয় থেকে শুরু করে মিছিল-মিটিং, মারামারি সব জায়গাতেই এরা নির্বিঘ্নে সামনে থেকে প্রটোকল দিয়ে গেছে। গুলশান-বনানী গ্যাং কালচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অসংখ্য অভ্যন্তরীণ অভিযোগ এদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিল।”
সংগঠনের সাবেক এই সমন্বয়ক তার পোস্টে আটক হওয়া যুককদের একটি ছবি যুক্ত করে বলেন, ‘ছবিতে থাকা রিয়াদ নামের এই ছেলেটি গত ডিসেম্বরে রূপায়ন টাওয়ারে আমার সামনে চরম উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা কয়েকজন মেয়ে তাকে শান্ত করতে গেলে সে উল্টো আমাদের ওপর চড়াও হয়। ঐ ঘটনার পর ছেলেটার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে হুমকি, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। আমি জেনে তখন একদমই অবাক হইনি, কারণ ততদিনে বৈষম্যবিরোধীতে এই ধরনের মানুষজনের আনাগোনা সর্বত্র টের পাওয়া যেত। রূপায়ন টাওয়ারে এদের প্রবেশ ছিল অবাধ। কেউ দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ তুললে কোনো জবাব পাওয়া যেত না। আর আমি চোখের সামনে দেখতাম, এসব লোক কীভাবে অবলীলায় সংগঠনের ভেতরে প্রবেশাধিকার পেয়ে যেত। এখন এতদিন পর এই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকালে ভাষা হারিয়ে ফেলি—যে যেভাবে পেরেছে, প্ল্যাটফর্মটিকে নষ্ট করেছে।’