একজন পুরুষ। একজন নারী। নিচে নির্জন সৈকত। ওপরে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। নেপথ্যে মাতাল সুর। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। ২০ সেকেন্ডের এই দৃশ্য যেন কোমলতা, সরলতা ও সৌন্দর্যের চমৎকার সম্মিলন!
ফরাসি পরিচালক ক্লদ লোলুশের কালজয়ী সৃষ্টি ‘অ্যা ম্যান অ্যান্ড অ্যা ওম্যান’ (১৯৬৬) চলচ্চিত্রের স্মরণীয় এ দৃশ্যটি তুলে ধরা হয়েছে ৭৮তম কান উৎসবের জোড়া পোস্টারে। ছবিটির দুই প্রয়াত ফরাসি তারকা আনুক এমে ও জ্যঁ-লুই ত্রাতিনোঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি পোস্টার দুটি।
উৎসব আয়োজকদের মতে, ‘অ্যা ম্যান অ্যান্ড অ্যা ওম্যান’ ছবির এই অংশ নিঃসন্দেহে সেলুলয়েডের সবচেয়ে স্মরণীয় আলিঙ্গন। এটি দর্শকদের মনে করিয়ে দেয়– গভীর ভালবাসার যুগলকে আসলে কোনোভাবেই আলাদা করা যায় না। এ সিনেমার কাহিনীও গড়িয়েছে তেমনই আবেগময় নানা ঘটনায়।
বলা ভাল, কান উৎসবের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো জোড়া অফিসিয়াল পোস্টার প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা। এতে দেখা যায়, আনুক এমে ও জ্যঁ-লুই ত্রাতিনোঁর এপাশ আর ওপাশ। দু’জনে একসঙ্গে!
লে ফিল্মস থার্টিন প্রযোজিত ‘অ্যা ম্যান অ্যান্ড অ্যা ওম্যান’ ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল জোড়া পোস্টারের গ্রাফিক ডিজাইন করেছে প্যারিস ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হার্টল্যান্ড ভিলা।

কান উৎসবের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘মোহাবিষ্ট করে যাওয়া মার্জিত দুই তারকা আনুক এমে ও জ্যঁ-লুই ত্রাতিনোঁ এই দুটি পোস্টারের মত চিরকাল আমাদের জীবনের চলচ্চিত্রকে আলোকিত করে যাবেন, যার রঙে ফুটে থাকে হতাশা থেকে উদ্ভাসিত তীব্র ভালোবাসা।’
৬০ বছর আগে ১৯৬৫ সালে শুটিং হওয়া ‘অ্যা ম্যান অ্যান্ড অ্যা ওম্যান’ ছবির গল্পে দুই নারী-পুরুষ দেখা হতেই একে অপরের প্রতি মোহাবিষ্ট হয়। তারা জীবনের বিভিন্ন প্রতিকূলতার সঙ্গে মানিয়ে নেয় ও শেষমেষ ঘুরে দাঁড়ায়। এতে চলচ্চিত্র বিষয়ে বিখ্যাত একটি দৃশ্য রয়েছে এমন–
জ্যঁ-লুই ত্রাতিনোঁ: যখন আহামরি কিছু না ঘটে, তখন আমরা বলি এটি একটি সিনেমার মতো। কেন সিনেমাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয় না, তোমার কী মনে হয়?
আনুক এমে: হয়তো এর কারণ, আমরা কেবল তখনই সিনেমা দেখতে যাই যখন সবকিছু ঠিকঠাক থাকে?
জ্যঁ-লুই ত্রাতিনোঁ: তাহলে তুমি কী মনে কর, যখন সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে না, তখন আমাদের প্রেক্ষাগৃহে যাওয়া উচিত?
আনুক এমে: কেন নয়?
১৯৬৬ সালে ২০তম কান উৎসবে ইতালিয়ান চলচ্চিত্র ‘দ্য বার্ডস, দ্য বিস অ্যান্ড দ্য ইতালিয়ানস’-এর সঙ্গে যৌথভাবে গ্রাঁ প্রিঁ (স্বর্ণপাম) জিতেছে ‘অ্যা ম্যান অ্যান্ড অ্যা ওম্যান’। ১৯৬৭ সালে ৩৯তম অস্কারে সেরা গল্প ও চিত্রনাট্য বিভাগে এবং সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে এটি। এছাড়া বিশ্বজুড়ে কয়েক ডজন পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে এই ছবি। এর প্রধান দুই অভিনয়শিল্পী কান উৎসবে পৃথকভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। জ্যঁ-লুই ত্রাতিনোঁ ১৯৬৯ সালে ‘জি’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেতা এবং আনুক এমে ১৯৮০ সালে ‘অ্যা লিপ ইন দ্য ডার্ক’ ছবির সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন।
৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠবে আগামী ১৩ মে। এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে বিচারকদের সভাপতি হিসেবে থাকছেন ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েট বিনোশ। গত বছর ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে জুরি প্রেসিডেন্ট ছিলেন ‘বার্বি’র পরিচালক গ্রেটা গারউইগ। আমেরিকান এই নির্মাতার স্থলাভিষিক্ত হলেন জুলিয়েট বিনোশ।
কান উৎসবের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট একজন নারী অন্য নারীর রেখে যাওয়া মর্যাদাপূর্ণ মূল বিচারকের মশাল বহন করবেন।
১৯৬৫ সালে কানে ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেত্রী অলিভিয়া ডি হাভিল্যান্ডের পর ১৯৬৬ সালে উৎসবটিতে বিচারকদের প্রধান ছিলেন ইতালিয়ান অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন। ছয় দশক পর ফের এমন উদাহরণ সৃষ্টি হলো। আর অফিসিয়াল পোস্টারের জন্য আয়োজকরা বেছে নিলেন ঠিক ৬০ বছর আগের একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্য!
ভূমধ্যসাগরের তীরে দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে সিনে জগতের এই মহাআয়োজন চলবে ২৪ মে পর্যন্ত।