মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে ঘেরা বরিশালের উজিরপুরে সাতলা ইউনিয়নের শাপলা বিল। দূর থেকে এটি দেখে মনে হবে যেন সবুজের মাঝে লাল গালিচা বিছানো। কাছে গেলে লাল রঙের শাপলায় ছেয়ে থাকা বিলটি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যেখানে সবুজ পাতার ফাঁকে থরে থরে ফুটে আছে হাজার হাজার লাল শাপলা। বিলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। তাই তাদের কথা ভেবেই এই বিলে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
সূর্য ওঠার মুহূর্তে ভোরের রাঙা আলোয় ফুটে থাকা লাল শাপলার অপার সৌন্দর্য শব্দে বর্ণনা করা যাবে না। আর রাতে ফোটা শাপলা প্রখর রোদে ধীরে ধীরে নেতিয়ে যায়। তাই ভোরের আলোয় যতদূর চোখ যায় বিল জুড়ে লাল সবুজে মেশানো প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যে ফুটে ওঠে বাংলার প্রকৃত রূপ।
বরিশাল নগরী থেকে সড়ক পথে ৪৫ কিলোমিটার দূরে এই শাপলা বিল। প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে বছর জুড়ে শাপলা ফোটে। তবে প্রতি বর্ষায় এর পরিমাণ আরও অনেক বেড়ে যায়। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাতলার বিল লাল শাপলায় ছেয়ে থাকে এবং তখনই সেখানে বেড়াতে যাওয়ার ভালো সময়।
এই শাপলা বিলের নয়নাভিরাম অপরুপ সৌন্দর্য দেখতেই প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে আসেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এখানে অনেক ভীড় হয়। এসব দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন অনেকে। তারা ছোট ছোট নৌকায় চড়ে ঘুরে ঘুরে এই শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
আনোয়ার সিকদার নামে এক পর্যটক জানান, ‘পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। এমন দৃশ্য দেখতে বার বার ছুটে আসব।’
শারমিন আক্তার নামে আরেক পর্যটক বলেন, ‘ফেসবুকে অনেক ছবি দেখেছি। তাই ঘুরতে চলে আসলাম। ভালো লেগেছে, আবারও এখানে ঘুরতে আসব।’
অন্যদিকে উজিরপুরের এই শাপলার বিলগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনায় বর্ষার ৩ মাস স্থানীয় অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা থাকে। এই সময়ে এখানকার মানুষদের তেমন কোনো কাজ না থাকায় পর্যটন নির্ভর রোজগারেই তাদের সংসার চলে।
তবে শাপলা বিলে আগত দর্শনার্থীদের অভিযোগ, এখানে নৌকা ভ্রমণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ভাড়া ধার্য করা নেই। ফলে মাঝিরা যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।
শাপলা বিল মাঝি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল মিয়া বলেন, ‘উজিরপুরের এই শাপলা বিলে নানাবিধ সমস্যার কারণে পর্যটকদের ভোগান্তি হচ্ছে। বর্তমানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানান উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে। যেগুলো শেষ হলেই এসব ভোগান্তি কমবে।’
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী সুজা জানান, পর্যটকদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে শাপলার বিলে নানা উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে সড়ক সংস্কার, ঘাট নির্মাণ ও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব চলমান কাজগুলোও সম্পন্ন করা হবে।
এতে শাপলার বিলে দর্শনার্থীদের আগমন আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিলকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা বিশ্রামাগার ও ঘাটের উন্নয়ন করা হয়েছে। সড়ক পথে মানুষের ভোগান্তি লাঘবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই আমরা সব কাজ সম্পন্ন করতে পারব।’