ঈদ মিছিলের ‘ভাস্কর্য’ ঘিরে বিতর্ক

admin
By admin
4 Min Read
ছবি :সংগৃহীত

নতুনত্বের মোড়কে এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপনের চেষ্টা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ঈদের আগের রাতে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে মিছিল হয়েছে। ঈদের নামাজ শেষে মুঘল ইতিহাসের ধারায় বাদ্য বাজিয়ে ঘোড়ায় চড়ে হয়েছে ঈদ মিছিল। আর সেই মিছিলে যোগ করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার আদলে নানা প্রতিকৃতি আর ভাস্কর্য।

ঈদের আমেজ শেষ হলেও বিতর্ক-সমালোচনা চলমান ঈদ মিছিলের প্রতিকৃতি আর ভাস্কর্য ঘিরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে চলছে এ ঘটনা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা। ঈদ ও ইসলামের সঙ্গে এসব ভাস্কর্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন কথা নিয়েই বেশি বিতর্ক হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগের কৃতিত্ব দাবি করে প্রচারনা চললেও বিতর্কে মুখ খুলতে সতর্ক উপদেষ্টারা। এরই মাঝে ধর্ম উপদেষ্টার নামে একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তীব্রতা পায় সমালোচনা।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বুধবার টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ‘ফেসবুক পোস্ট আমার নয়। এটি অন্য কেউ করেছে।’
‘ঈদ উৎসব ঘিরে মিছিলের আয়োজন করেছে অন্য মন্ত্রণালয়, সে বিষয়ে আমার মতামত দেয়া সঠিক হয় না।’- বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঈদ মিছিলের ছবি যুক্ত করে অনেকেই ব্যঙ্গাত্মক মতামত জানিয়েছেন। মিছিলের ভাস্কর্য নির্মাণের ধরণ ও মান নিয়েও সমালোচনা চলছে। ঈদ মিছিলের একটি ভাস্কর্যে গাধার পিঠে উল্টো দিকে বসে আছেন কোনো এক ব্যক্তি- এমন একটি ছবি ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। সেই ব্যক্তি দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বলেও মন্তব্যে উল্লেখ করা হচ্ছে। কেউ বলছেন গাধার পিঠে বসা ব্যক্তিটি জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুল ইসলামের মতো। তুরস্কের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ভাস্কর্যের আদলে এটি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করা হলেও চেহারার বিকৃতি এসব বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হওয়া এবারের ঈদ আনন্দ মিছিলের আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। মিছিলে ছিল সুসজ্জিত পাঁচটি শাহী ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্যযন্ত্র। ছিল সুলতানি-মুঘল আমলের ইতিহাসচিত্র সম্বলিত পাপেট শো। মিছিল শেষে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

ঈদ মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ অনেকবছর পর আমরা আবার ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঈদ মিছিল আয়োজন করতে পেরেছি। আগামী দিনে আমরা প্রতিবছর এক সঙ্গে এভাবে ঈদ উদযাপন করব। আমাদের ঈদ উৎসবও এখন থেকে আনন্দময় হবে। আমরা একসাথে ঈদ মিছিল করব। ঈদের মেলা উপভোগ করব।’

এর আগে ‘চাঁদ রাতের মিছিল’ আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। সেটি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক কম।

আমেরিকাভিত্তিক এক সংবাদমাধ্যমে মঙ্গলবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘চাঁদ রাতের শিল্পকলা একাডেমির প্রস্তুতি সময় আমাদের এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ ফোন করেন। উনি আমাকে বলেন এক সময় আমাদের এমন ঈদের মিছিল চল ছিল, এটা আরেকবার রিভাইভ করতে চাই। আমি বলেছি, গ্রেড আইডিয়া। আমরা যে কালচারাল পলিসি এক্সজিকিউট করতে চাই বাংলাদেশে, সেটার সঙ্গে পারফেক্টলি ম্যাচ করছে। লেটস ডু ইট টুগেদার’।

এক প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা মূলত ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের আয়োজন। ঈদ মিছিলে যে মোটিভগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এটা অনেক তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে। মাত্র ৬/৭ দিনের আয়োজন। ফলে ইভেন্ট কিউরেশনে অনেক রকমের জিনিস আছে, আমি শিউর ঢাকা সিটি করপোরেশন এটা থেকে লেসন নিয়েছে। পরের ঈদ মিছিলে কিউরেশন আরো ম্যাচুয়ের করা হবে। ঈদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।’

এদিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ মিছিলে মূর্তিবাদী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান এ বিষয়ে নিন্দা জানান। মজলিসে তাহাফফুজে খতমের মতো সংগঠনগুলোও ভাস্কর্য নিয়ে ঈদ মিছিল আয়োজনের বিরোধিতা করেছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *