তুলসী ‘ভুল’ ছিল; ইসরায়েলের হামলা থামানো ‘কঠিন’ হবে: ট্রাম্প

4 Min Read
তুলসি গ্যাবার্ড, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক। ছবি: ডিএনআই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডেরে ইরান সম্পর্কে আগের মন্তব্য ‘ভুল’ ছিলো। যেখানে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে না ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে।

এপি তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ‘ইরানে ইসরায়েলের হামলা থামিয়ে একটি যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য সমঝোতার চেষ্টা করাও “খুব কঠিন” হবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনার প্রেক্ষাপটে তুলসী গ্যাবার্ড মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দের তালিকা থেকে সরে গেছেন।বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এমনটাই জানিয়েছেন।

এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, অতীতে তুলসীকে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ৪৩ বছর বয়সী তুলসীকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে মনোনীত করেন ট্রাম্প। আলোচিত-সমালোচিত এই মনোনয়ন মার্কিন সিনেটে অনুমোদন পাওয়ার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তুলসী দায়িত্ব নেন। আগে গোয়েন্দা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলেও দুই দশকের বেশি সময় মার্কিন বাহিনীতে সেনাসদস্য হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তুলসীর।

অবশ্য এনবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলা কেউই এটা মনে করেন না যে ট্রাম্পের ইরান নীতির কারণে তুলসী প্রশাসন ছাড়বেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়েও পড়ে।

রাজনৈতিকভাবে তুলসীর নাজুক অবস্থানটি চলতি সপ্তাহে প্রকাশ্যে আসে, যখন ট্রাম্প গত মার্চ মাসে কংগ্রেসে দেওয়া তার (তুলসী) সাক্ষ্য নিয়ে তাকে একপ্রকার আক্রমণ করেন।

কংগ্রেসে তুলসী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, যা ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

নিউ জার্সিতে একটি নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে পৌঁছে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল গাবার্ডের সেই মন্তব্য নিয়ে। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভুল। কে বলেছে এটা?’

যখন তাকে জানানো হয় যে ওই মন্তব্যটি গ্যাবার্ড করেছিলেন, ট্রাম্প বলেন, ‘সে ভুল।’

পরে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) গ্যাবার্ড দাবি করেন, তার বক্তব্যকে খণ্ডিত ভাবে প্রচার করা হয়েছে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য।

তিনি লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে, ইরান চাইলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত করতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তা ঘটতে দেয়া যাবে না- এবং আমি তার সঙ্গে একমত।’

গাবার্ডের পূর্ববর্তী বিশ্লেষণ থেকে সরে আসার একদিন পরেই হোয়াইট হাউস বলেছিল, ট্রাম্প আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে সরাসরি সামরিকভাবে জড়াবে কিনা।

হোয়াইট হাউস বলেছে, এই সময় নেয়া হচ্ছে কারণ ‘ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটি বাস্তব সম্ভাবনা সামনে রয়েছে।’

তবে শুক্রবার ট্রাম্প নিজেই সেই আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তিনি একটি যুদ্ধবিরতির পক্ষে, তবে ইসরায়েলের ইরানে চলমান হামলা থামানো ‘খুব কঠিন’ হবে।

যখন ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, ইরান বলছে-যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই আলোচনায় আগ্রহী হয়, তাহলে তারা ইসরায়েলকে হামলা বন্ধ করতে বলুক।

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘এ মুহূর্তে এমন অনুরোধ করা কঠিন। কেউ যদি জয়ী হতে থাকে, তখন থামানোটা একটু কঠিন হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত, ইচ্ছুক এবং সক্ষম। আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলছি, দেখা যাক কী হয়।’

পরে তিনি যোগ করেন, ‘বিষয়টি যতই দেখবেন, ততই কঠিন মনে হবে থামানো। যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইসরায়েল ভালো করছে। আর আপনি বলতে পারেন ইরান কিছুটা কম ভালো করছে। তাই কাউকে থামানো একটু কঠিন।’

ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা এপিকে জানিয়েছে, তুলসী অনেক দিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যা নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *