আশ্রয়কেন্দ্রে ‘আশ্রিত’ মহেশখালীর প্রভাবশালীরা

টাইমস ন্যাশনাল
3 Min Read
মহেশখালীর একটি আশ্রয়কেন্দ্রের জরাজীর্ণ হাল। ছবি: টাইমস

ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা। সেখানকার প্রায় অর্ধশত আশ্রয়কেন্দ্র নামের ভবনগুলোর অধিকাংশ জরাজীর্ণ অথবা প্রভাবশালীদের দখলে। দুর্যোগ হলেও তা ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয়রা। নতুন ভবন নির্মাণসহ দখলদার উচ্ছেদে কার্যত পদক্ষেপ নেই দীর্ঘদিন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে মহেশখালীতে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়। তখন সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সেগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। কার্যত পরিত্যক্ত এসব ভবন এখন প্রভাবশালীদের দখলে। কেউ দোকান করেছেন, কেউ আবার সংসার পেতেছেন এ আশ্রয়কেন্দ্রে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা মহেশখালীতে আশ্রয়কেন্দ্রের ঘাটতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। পুরনো আশ্রয়কেন্দ্রের তালিকা করা হয়েছে, তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আর কয়েকটি নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’

‘যারা আশ্রয়কেন্দ্র দখল করে আছেন, তাদের বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সহসাই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

মহেশখালীর একটি আশ্রয়কেন্দ্র, যার বেশিরভাগ অংশ প্রভাবশালীদের দখলে। ছবি: টাইমস

মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া, হোয়ানক, শাপলাপুর ও ধলঘাটাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, আশ্রয়কেন্দ্রের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কোথাও ছাদ ফেটে পানি পড়ে, কোথাও দরজা-জানালা ভেঙে পড়ে আছে। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে এখন গোডাউন, দোকান, গবাদিপশুর খামার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

অতিবৃষ্টি হলেই ডুবে যায় কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গা, পৌরসভার চরপাড়া, ছোট মহেশখালীর মুদিরছড়া ও উম্বনিয়া পাড়া, বড় মহেশখালীর বরদিয়া, হোয়ানকের কালাগাজির পাড়া, ধলঘাটা ইউনিয়ন, মাতারবাড়ীর সাইটপাড়াসহ কয়েকটি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ।

মহেশখালীর আদি উপদ্বীপ হলো ধলঘাটা ইউনিয়নে দশ হাজার মানুষের বসবাস। বঙ্গোপসাগরের কিনারার এই ইউনিয়ন অতি জোয়ার হলেই প্লাবিত হয়। এখানে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে আছে দুটি স্কুল ও একটি একতলা ভবন।

সেখানকার স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্কুলের পাশেই যে আশ্রয়কেন্দ্র, সেটা ব্যবহার অনুপযোগী। ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই।’

মহেশখালী উপজেলার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ বাচ্চু একটি তিনতলা আশ্রয়কেন্দ্র দখল করেছেন। তিনি ধলঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। বাচ্চুর সংসার এ ভবনেই। সেখানে তার সালিশ-বিচারের নামে করা ‘টর্চার সেল’ থাকার অভিযোগ রয়েছে।

মাতারবাড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা কাইমুল ইসলাম ছোটন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্র এখন গুদাম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিপদে পড়লে সেখানে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই।’

উপদ্বীপ সোনাদিয়া সাগরের একবারে মাঝখানে। সেখানে প্রায় দেড় হাজার মানুষের বসবাস। এ দ্বীপের একমাত্র ভবন সেখানকার স্কুল।

সোনাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘ভবনটি খুবই নড়বড়ে। সোনাদিয়ার মানুষজনের জন্য বিকল্প আশ্রয়কেন্দ্র নেই।’

স্থানীয় উন্নয়নকর্মী রুহুল আমিন বলেন, ‘মহেশখালীতে তিন লক্ষাধিক মানুষের বাস। আশ্রয়কেন্দ্র আছে ৪০-৫০টি, যার অধিকাংশই জরাজীর্ণ। এখানে আরও ৫০টি আধুনিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রয়োজন।’

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *