আরপিও সংশোধনে প্রস্তাব: ফেরারি আসামি হবেন নির্বাচনে অযোগ্য

টাইমস রিপোর্ট
5 Min Read

একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব এনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, আদালত কোনো ব্যক্তিকে ফেরারি আসামি ঘোষণা করলে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, নিজ আসনের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য হতে না দেওয়াসহ নানা কিছু।

বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সরকারের কাছে পাঠানো সংস্কার প্রস্তাবের সার্বিক বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৬টি সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

আরপিওতে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যেকোনো ধরনের ফৌজদারি মামলার ফেরারি আসামি হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অযোগ্য হবেন। অপব্যবহারের আশংকা থেকে এটা করতে চাইনি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এটা করা হয়েছে। সামনে যদি অপব্যবহার হয়, তবে আবার এটা পর্যালোচনা করতে হবে।’

‘বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করেছে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মনে করেছে এমন বিধান রাখা ভালো হবে। সামনে যদি এটির অপব্যবহার হয় তখন প্রয়োজনে আবার সংশোধন করা যাবে।’

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘এবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে ইসি। আগে প্রিজাইডিং অফিসার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল। মাঝখানে এটা সংশোধন করে বিধান করা হয়েছিল যে ভোট শুরুর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি দেখবে, তারা রিপোর্ট দিলে প্রিজাইডিং অফিসার ভোট শুরু করতেন। আমরা এটাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছি।’

‘এতে কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হবেন সর্বেসর্বা। এছাড়া সংবাদমাধ্যমের কর্মীসহ কে কতক্ষণ ভোটকক্ষের ভেতরে থাকবেন তা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রিজাইডিং অফিসারকে দেওয়া হয়েছে।’

কোনো প্রার্থী যদি হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন বা সেটা যদি ইসি বুঝতে পারে তাহলে কমিশন সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও জানান তিনি।

এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য প্রমাণিত হলে যে অফিসের জন্য তিনি নির্বাচিত হচ্ছেন অর্থাৎ পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে যেকোনো সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রিকল করা যাবে। এমনকি তার প্রার্থীতাও চলে যাবে এবং তিনি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আরপিও-তে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, প্রার্থীরা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে চেয়ার হিসেবে বা সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন না।’

এফিডেভিটের মধ্যে নমিনেশন পেপারের সঙ্গে সর্বশেষ ট্যাক্স ইয়ারের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নটাও যুক্ত করতে হবে জানিয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘আগে আরপিওতে লেখা ছিল সোর্স অব ইনকাম। এখানে আমরা আরেকটু যুক্ত করেছি, বোথ অ্যাট হোম অ্যান্ড অ্যাব্রড। অর্থাৎ দেশে এবং দেশের বাইরে। একইভাবে স্টেটমেন্ট অফ প্রপার্টি এবং ডেবট অর্থাৎ সম্পদ এবং তার দেনার যে বর্ণনা ছিল সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জন্য এটাও দেশে এবং দেশের বাইরের কথাটা যুক্ত করা হয়েছে।’

না ভোটের বিষয়ে কী প্রস্তাব করা হয়েছে তাও জানান সানাউল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘না ভোটের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্তটা হয়েছিল যে, এখন থেকে কোথাও একক প্রার্থী থাকলে সরাসরি তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে না। তাকে না এর বিপক্ষে ভোট করতে হবে এবং দ্বিতীয়বার তফসিল করে নতুনভাবে ঘোষণা করার পরে আবারো একই প্রার্থী হচ্ছে, তখন আর না ভোট হবে না। কিন্তু একবার অন্ততপক্ষে না ভোটের সঙ্গে সিঙ্গেল প্রার্থীকে প্রতিযোগিতা করতে হবে।’

‘আর যদি কোনো কারণে না ভোটে বেশি ভোট পড়ে তাহলে নতুন করে তফসিল হবে। সেই তফসিলে গিয়েও যদি আবারো দেখা যায় যে একমাত্র প্রার্থী আছে তাহলে আর ইলেকশন হবে না।’

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে গেলেও নিজ নিজ দলের যে সিম্বল বা প্রতীক আছে, সেই প্রতীকেই প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন। ইলেকশন এজেন্ট হিসেবে বা নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে যাকে নির্বাচন করা হয় তাকেও সংশ্লিষ্ট কনস্টিটিয়েন্সির একজন ভোটার হতে হবে। এটা আগে ছিল না।’

নতুন বিধান অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার চাইলে যেকোনো একটি কেন্দ্র, একাধিক কেন্দ্র বা সমস্ত এলাকার নির্বাচন, এমনকি ফলাফলও স্থগিত করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এছাড়া নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সরকারি কাজে কর্মরতরা নির্বাচনের দিন তার সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন না, তবে তারা ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচনী কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত আছেন, তারা ভোট দিতে পারবেন। এছাড়া যারা নিরাপত্তা হেফাজতে আছেন- জেলে হোক বা অন্য কোথাও হোক, তারাও ভোট দিতে পারবেন।

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘মিডিয়া পার্সোনালরা ভোট গণনার সময় ভোট কেন্দ্রের মধ্যে থাকতে পারবেন। তবে একই শর্ত সবার জন্য প্রযোজ্য যে, ভোট কাউন্টিং এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে থাকতে হবে।’

এক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়ার বিষয়সহ প্রিসাইডিং অফিসারের হাতে থাকবে সব ক্ষমতা, কারণ তিনিই কেন্দ্রের সব নিয়ন্ত্রণ করবেন।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *