দেব-শুভশ্রী—টালিউড তথা কলাকাতার বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির একসময়ের জনপ্রিয় তারকা জুটি। দুজনের পথচলাও প্রায় কাছাকাছি সময়ে। পর্দায় রোমান্স করতে গিয়ে কখন যে দুজন দুজনকে ভালোবেসেছিলেন তা মনে হয় কেউই টের পাননি। প্রায় অর্ধ যুগের প্রেম যখন সবাই ধরে নিয়েছিলেন পরিণয়ের দিকে যাচ্ছে ঠিক তখনই ঘটে ছন্দপতন। দুজনের দুটি পথ হয়ে যায় আলাদা।
২০১৫ সালে যখন এ ‘লাভ বার্ড’ জুটি ভেঙে যায়, তখন আটকে যায় ‘ধূমকেতু’। ছবিটি নিয়ে গেল এক দশকে প্রচুর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন তারা দুজন। ১৪ আগস্ট ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে আবার পর্দায় দেখা যাবে ভক্তদের প্রিয় ‘দেশু(Deshu)’ জুটিকে।
শুভশ্রী চেয়েছিলেন বিয়ে করে সংসার করবেন। আর দেব তখন মাত্র স্টার হয়েছেন। তিনি চাননি ওই মুহূর্তে কোনো বাঁধনে জড়াতে। এসব নিয়েই ‘ধূমকেতু’র শুটিংয়ের মধ্যেই তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ছবিতে যখন দেবের সঙ্গে শুভশ্রীর বিয়ের দৃশ্যায়ন হচ্ছিলো, তখন সে শট দিয়েই নিজের গাড়িতে গিয়ে ওঠেন শুভশ্রী। একাই ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরেন। ৫০ মিনিটের সে দূরত্বে পুরোটা সময় কান্না করেছিলেন।
‘ধূমকেতু’ ছবি মুক্তির তারিখ ঘোষণার পর থেকে দুজন একটু আলাদা করেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ‘দেশু’-র ভক্তদের আশা ছিল অন্তত একবারের জন্য হলেও তারা একসঙ্গে ছবিটি নিয়ে কথা বলবেন। তাদের সে আশা পূরণ হলো ‘ট্রেলার লঞ্চ’ অনুষ্ঠানে।
এ দশ বছরে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেননি। ছিলেন পরস্পরের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্লক লিস্টে। তবে যতই দূরত্ব হোক, অভিমান হোক সত্যিকারের ভালোবাসা কি কখনও ভুলে থাকা যায়? চাইলেই কি কথা না বলে থাকা যায়? অনুষ্ঠানে উপস্থাপক রোহান তাদেরকে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করেন, তারা আবার কবে পরস্পরকে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে ফলো করবেন। দেব জানান, শুভশ্রী তার ব্লক লিস্টে ছিল। তখন সবার সামনে আনব্লক করেন এবং ফলো দেন। শুভশ্রীও মঞ্চে তার সহকারীকে ডাকেন। তার কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফলো ব্যাক দেন। দীর্ঘদিনের দুরত্ব ঘুচলো কিছুটা হলেও।
২০০৯ এ রাজ চক্রবর্তীর ‘চ্যালেঞ্জ’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তাদের মধ্যে পরিচয়। ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া’ ছবিতে গিয়ে তা গভীর প্রেমে রূপান্তরিত। ‘চ্যালেঞ্জ’-এর একটি দৃশ্যের মত হঠাৎ করে মঞ্চে শুভশ্রী দেবকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে’। দেব বলেন, ‘কেন?’ দর্শকেরাই সেই উত্তর দিয়ে দেন, ‘এমনি’। এর পরে, হাত মিলিয়ে নেন দেব শুভশ্রী। নস্ট্যালজিক দর্শকরা।
শুধু আনব্লক, ফলো কিংবা পুনরায় ‘বন্ধুত্ব’ স্থাপন নয় দেবের প্রস্তাবে হুট করে তার সঙ্গে নাচেনও শুভশ্রী। কোন প্রকার প্রস্তুতি ছাড়া তারা ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘রোমিও’, ‘খোকাবাবু’-র গানে নাচেন। একই সঙ্গে পরস্পর পরস্পরের প্রশংসাও করেন।
অনেকদিন পর হলেও তাদের জুটির ছবিটিকে অনেক উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য শুভশ্রীর বক্তব্য, ‘আমি আর দেব এতটা চেষ্টা করিনি এই জুটিটাকে বাঁচিয়ে রাখার। কিন্তু দর্শকরা, তাদের ভালবাসায়, অনুভূতিতে, কান্নায়, আনন্দে আমাদের জুটিকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।’ অন্যদিকে এ নিয়ে দেবের বক্তব্য, ‘শুভশ্রীর নাম থেকে দেবকে সরানো যবে না। দেবের নাম থেকে শুভশ্রীকে সরানো যাবে না। যদিও এর প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। স্কুলে নাকি শিশুরা দেব-দেবীর রচনার জায়গায় দেব-শুভশ্রীর কথা লিখে দেয়।’
দেবের আরও স্পষ্ট উত্তর, ‘এই জন্মে অন্তত আমি আমার নাম থেকে শুভশ্রীকে সরাতে পারব না। শুভশ্রীর নাম থেকে ও আমাকে সরাতে পারবে না। যখন জুটি নিয়ে আলোচনা হবে।’ তবে এরপর কী একসঙ্গে ছবি করবেন দেব-শুভশ্রী? এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া মাত্রই দু’জনেই জানালেন ভাল গল্প পরিচালক এবং প্রযোজক পেলে অবশ্যই তারা একসঙ্গে ছবি করবেন।
তবে এরপর কি একসঙ্গে ছবি করবেন দেব-শুভশ্রী? এই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া মাত্রই দু’জনেই জানালেন ভাল গল্প পরিচালক এবং প্রযোজক পেলে অবশ্যই তারা একসঙ্গে ছবি করবেন। তবে দেবের প্রযোজনায় শুভশ্রী কাজ করলেও দেবকে নাকি নিজের প্রযোজনায় এফোর্ট করতে পারবেন না শুভশ্রী। তখন দেবের অনুরাগীদের দাবি, দেব যেন বিনা পারিশ্রমিকে কাজটা করে দেয়।
এখন দুজনের পথ আলাদা। বিচ্ছেদের কারণে চার বছর ছবি করেননি শুভশ্রী । এখন বিয়ে করেছেন রাজ চক্রবর্তীকে। সংসার, সন্তান নিয়ে দারুণ সময় পার করছেন। অন্যদিকে দেবের জীবনেও এসেছে নতুন মানুষ— রুক্মিণীও। এখন দেখার বিষয় দশ বছর পরে যে বরফ গললো তা সামনের দিনগুলোতে এমনই থাকে কিনা