আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নির্যাতনের মুখে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে অপেক্ষায় আছে। সুযোগ পেলে তারা যেকোনো সময় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

আরাকান রাজ্যের বুথিডং থেকে আসা সেলিম উল্লাহ জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির নির্যাতনে তিনি পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এর ফলে নাফ নদে থাকা জেলেসহ সীমান্তবর্তী মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’

বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, কিছু লোক সীমান্ত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনুপ্রবেশের সম্ভাব্য পয়েন্টগুলোতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

সীমান্তে পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত এক বছরে নতুন করে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখন অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তে অপেক্ষমাণ।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের শেষ নাগাদ আরও ৫০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘সীমান্তে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বর্ডার দিয়ে মাদক ও অস্ত্রসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সর্বদা তৎপর থাকলেও চ্যালেঞ্জ ক্রমেই জটিল হচ্ছে।’

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর মনে করেন, মিয়ানমারের নীতি পরিবর্তন না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন কিংবা ইউক্রেনের শরণার্থীরা তৃতীয় দেশে আশ্রয় পেয়েছে, কিন্তু রোহিঙ্গারা সে সুযোগ পায়নি। ফলে বাংলাদেশের ওপর তাদের চাপ ক্রমশ বাড়ছে।’

সম্প্রতি সীমান্তে অস্থিরতার মধ্যে বিজিবি আরাকান আর্মির এক সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করেছে। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকেও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের নাগরিক।

২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের নির্যাতনে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। নাফ নদ পার হয়ে মংডু থেকে শুরু হওয়া সেই ঢল এখনো থামেনি। আবারও একই ধরনের সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কার্যকর না হলে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামা কেবল সময়ের ব্যাপার।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *