চাকরি স্থায়ীকরণ ও বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ১০০৪ স্বাস্থ্যকর্মী। তারা কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে নিযুক্ত।
শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা দাবি আদায়ের আগে পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারী স্বাস্থ্যকর্মী নিপসমের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘করোনা মহামারির সময় ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিলেও এখন আমরা অবহেলার শিকার। দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, এ অবস্থায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলকে কাজে না লাগালে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। অথচ আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিও উপেক্ষা করা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ধাপে ধাপে ইআরপিপি প্রকল্পে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে তাদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত, তবে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হয়।
এ অবস্থায় গত ৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্টিয়ারিং কমিটির ১৩তম সভায় ইআরপিপি প্রকল্পের মেয়াদ ৬ মাস বাড়িয়ে জুন ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এর ভিত্তিতে আগের কর্মীদের মৌখিকভাবে দায়িত্বে বহাল থাকতে বলা হয়।
আন্দোলনরত স্বাস্থ্যকর্মী ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ‘মৌখিক নির্দেশনা পেয়ে জানুয়ারি মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত নিয়মিত কাজ করলেও বেতন পাননি কেউ। অন্যদিকে গত ২৫ মে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও গবেষণা শাখা একটি চিঠির মাধ্যমে সকলকে দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। এতে আমরা হতবাক।’
স্বাস্থ্যকর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘একটি প্রভাবশালী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে দক্ষ জনবল বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ লোক নিয়োগ দিতে চাইছে। এখন ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে হাজার পরিবার এখন চরম অনিশ্চয়তায়, আর্থিক সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’
জানা গেছে, ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া/ক্রিটিক্যাল কেয়ার) ১৬ জন, মেডিকেল অফিসার (আইসিইউ) ৮০, ল্যাব কনসালট্যান্ট ৩০, সিনিয়র স্টাফ নার্স ১৫০, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১২৬, ডাটা অপারেটর ১৯০, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট ৫১, ওয়ার্ড বয় ১০৪, আয়া ১০৩ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী ১৫১ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৫৯ জন রাজধানীতে, ১৫৩ জন পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে, এবং ৫৯২ জন জেলা শহরে কোভিড ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় কর্মরত ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে শনিবার শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শুরু করলেও দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।