আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

সোমবার বিকালে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন এরই মধ্যে হয়ে গেছে।’
‘অধ্যাদেশ অনুসারে বিষয়টি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের’, উল্লেখ করেন তিনি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
এর আগে রোববার জারি করা এক অধ্যাদেশে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে কোনো ধরনের প্রচার—সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, বিবৃতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট বা জনসমাবেশ—এখন থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এর পরদিনই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সদ্য ওই প্রজ্ঞাপনটি জারি হলো।
রোববারের জারি করা অধ্যাদেশের মাধ্যমে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০ ধারায় সংশোধন আনা হয়েছে। আগে শুধু ‘তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা নিষিদ্ধ সংগঠন’-এর ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য ছিল, তবে সংশোধিত ধারায় বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) উপধারার অধীনে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের পক্ষে যে কোনো প্রচার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।’
এই সংশোধনী রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়।
পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আগের আইনে নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম প্রতিহত করার পর্যাপ্ত বিধান ছিল না। তাই বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় সংশোধনীকে ‘যথাযথ ও প্রয়োজনীয়’ বলা হয়েছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী, এখন সরকার ‘যুক্তিসংগত কারণ’ দেখিয়ে গেজেটের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩-এর সাম্প্রতিক সংশোধনের পরপরই, এ পদক্ষেপ নেওয়া হলো। এতে এখন গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে কোনো রাজনৈতিক দলকেও বিচার করা সম্ভব। এর আওতায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও মামলা চলছে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়নের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে গণআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে, ওই সময় প্রায় দেড় হাজার জন নিহত হয়।
শনিবার রাতের জরুরি বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা চালানো এবং গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংসের অভিযোগে ‘ফ্যাসীবাদি’ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পাশপাশি এর নিবন্ধন বাতিল এবং দলটিকে বিচারের দাবি জোরাল হয়।