বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, আইনি ভিত্তি না থাকলে জুলাই সনদসহ সংস্কার প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন কোনো অর্থ বহন করবে না। তিনি বলেন, ‘আইনি ভিত্তি না থাকলে এ সনদে স্বাক্ষর করবে না জামায়াত।’
তিনি বলেন, ‘কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে এবং বেশ কিছু বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও আইনি ভিত্তি না থাকলে এই পুরো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার ২৩তম দিনের সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সংস্কার বাস্তবায়নই আসল কথা। আইনগত ভিত্তি ছাড়া এটি কেবল একটি ভালো কথার আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আমরা যদি আইনগত ভিত্তি না দেখি, তাহলে এর ওপর স্বাক্ষর করায় কোনো লাভ নেই।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘সংলাপে আমাদের মূল বক্তব্য ছিল—এটা কোনো “স্বাক্ষরের খেলা” নয়। সংকট হচ্ছে বাস্তবায়নের অভাবে। যদি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ না থাকে, তাহলে সনদের স্বাক্ষর দিয়ে লাভ কী?”
তিনি অভিযোগ করেন, যেসব দল আইনি ভিত্তির বিরোধিতা করছে তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি বলেন, ‘এত আলোচনা, এত সময়, এত সম্মেলন—সবটাই নিরর্থক হয়ে যাবে যদি এটিকে আইনি কাঠামো দেওয়া না হয়। আমরা চাই কমিশন এবং সরকার জনগণের সঙ্গে করা অঙ্গীকার রক্ষা করুক।’
‘জাতির প্রতি আর কোনো তামাশা করার সুযোগ দেব না। আইনগত ভিত্তি না দেয়া হলে প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে,’ যোগ করেন তিনি।
তাহের আরও বলেন, ‘এদিনের আলোচনায় দুর্নীতি দমন কমিশন, কন্ট্রোলার জেনারেলের কার্যালয়, ন্যায়পাল ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রস্তাবগুলোর পক্ষে থাকলেও বিএনপি ও কয়েকটি দল মতানৈক্য জানিয়েছে।’ ‘কমিশন এখন নোট অব ডিসেন্ট গ্রহণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’
উচ্চকক্ষ গঠনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রায় সব দলই এর পক্ষে, তবে প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। জামায়াতসহ বেশ কিছু ইসলামপন্থী দল নিম্নকক্ষ এবং উচ্চকক্ষ—দুই ক্ষেত্রেই পূর্ণ প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতির দাবিতে একমত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গত ৫৪ বছরে দলীয়করণ, দখল, জালিয়াতি ও ভোটারবিহীন নির্বাচন দেখেছি। সেজন্য আমরা চাই একটি আইনি ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়িত হোক, যা সারা বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশে প্রযোজ্য।’
এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সংস্কার শুরু হোক এখন থেকেই। যে বিষয়গুলো এখন বাস্তবায়নযোগ্য, তা তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হোক। আর ভবিষ্যতের যেসব বিষয়, তা পর্যায়ক্রমে করা হোক। কিন্তু আইনি ভিত্তির প্রশ্নে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’
এই সংস্কার যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে। শতভাগ না হলেও এটি হবে একটি নতুন যাত্রার শুরু, যোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবারের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অংশ নিচ্ছে আমন্ত্রিত ২৮টি রাজনৈতিক দল ও ২টি জোটের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে উপস্থিত আছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।