ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঁচ মাসের চিকিৎসা শেষে শুক্রবার বাড়ি ফিরছে দেহ জোড়া লাগা জমজ শিশু জুহি ও রুহি। গত জুনে চার ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারে তাদের পৃথক করতে সক্ষম হন ঢামেকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, জমজ শিশু জুহি-রুহির জন্ম নীলফামারীর জলঢাকায়। তাদের বাবা পেশায় রিকশাচালক ও মা গৃহিণী। শিশু দু’টির দেহ জন্মগতভাবে জোড়া লাগানো ছিল। তাদের দুজনকে গত জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।
ঢামেকের শিশু সার্জারি (ইউনিট-২) বিভাগের অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা জানান, শিশু দু’টি ছোট থাকায় সেসময় তাদের আলাদা করা সম্ভব হয়নি। পরে তাদের অবজারভেশনে রেখে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
কানিজ হাসিনার নেতৃত্বে ২৪ জুন জুহি-রুহিকে আলাদা করার চেষ্টায় জটিল অস্ত্রোপচারে অংশ নেন হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা। চার ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচার করে পৃথক করা হয় তাদের।
এই জটিল অস্ত্রোপচারে অংশ নেন শিশু সার্জারি ছাড়াও প্লাস্টিক সার্জারি, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, নিওনেটোলোজি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, অর্থোপেডিক, নবজাতক বিভাগ, নিউরো সার্জারি ও অ্যানেস্থেসিওলোজি বিভাগের চিকিৎসকরা।
ডা. কানিজ হাসিনা জানান, অস্ত্রোপচারের পর শিশু দুটিকে হাসপাতালের পোস্ট অপারেটিভ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) রাখা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ, বিশেষায়িত চিকিৎসা ও সেবার পর এখন তারা সুস্থ আছে। তাদের খাওয়া-দাওয়া ও মলমূত্র ত্যাগে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
ডা. কানিজ হাসিনা আরও বলেন, ‘এটি ছিল দীর্ঘ ও জটিল একটি অস্ত্রোপচার। প্রতিটি মুহূর্তে জুহি ও রুহির সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
সম্পূর্ণ বিনা খরচে জুহি-রুহিকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বাবা-মায়ের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ।
জমজ শিশু জুহি-রুহির মা শিরিনা বেগম বলেন, ‘আমার ১০ বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। বর্তমানে জুহি ও রুহির বয়স ৭ মাস ২৩ দিন। জন্মের সময় তাদের দুজনের শরীর জোড়া লাগানো ছিল।’
‘ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসার পরে দীর্ঘ পাঁচ-ছয় মাস চিকিৎসা শেষে আমার দুই মেয়ে এখন ভালো আছে। চিকিৎসকরা আমাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। আমি সব চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই’, যোগ করেন শিরিনা বেগম।