বাংলা চলচ্চিত্রে প্রেমের চিত্রায়ণ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল অতিনাটকীয়, প্রথাগত ও খানিকটা কৃত্রিম। কিন্তু নব্বইয়ের দশকের শুরুতে এক নতুন হাওয়া বইয়ে দেন সালমান শাহ। তার সিনেমার প্রেম ছিল একেবারেই ভিন্ন—কখনো আবেগঘন, আবার কখনো বিদ্রোহী।
প্রথম ছবি ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তির পরই দর্শকরা বুঝতে পারলেন, প্রেমকে দেখানোর নতুন এক ভাষা এসেছে। সেই ছবিতে সালমান-মৌসুমী জুটির রসায়ন আজও স্মরণীয়। গান, সংলাপ, এমনকি সালমানের পর্দায় উপস্থিতি প্রেমের গল্পকে করে তুলেছিল বিশ্বাসযোগ্য।
পরবর্তী সময়ে ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘প্রেমযুদ্ধ’, ‘সুজন সখী’ কিংবা ‘তুমি আমার’—প্রতিটি ছবিতে তিনি প্রেমকে ফুটিয়ে তুলেছেন আলাদা রূপে। শাবনূর বা অন্যান্য নায়িকার সঙ্গে রোমান্স ছিল অনবদ্য। তার অভিনয়ে প্রেম মানে কেবল নায়ক-নায়িকার আবেগ নয়, বরং সামাজিক প্রতিরোধ, পরিবারকে জয় করা, কিংবা নিজের অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠার লড়াইও।
নব্বইয়ের তরুণ-তরুণীরা তার সিনেমার সংলাপ মুখস্থ বলতেন। প্রেমপত্রে লেখা হতো তার ছবির গান। সিনেমা হলে হাত ধরে বসা যুগলদের কাছে সালমান ছিলেন অনুপ্রেরণা। তার ভঙ্গি, মিষ্টি হাসি, চোখের চাহনি—সবকিছুতেই ছিল প্রেমের স্পন্দন।
তার সিনেমায় প্রেম শুধু বিনোদন ছিল না, ছিল একধরনের মুক্তি। সে সময়ের সামাজিক বাস্তবতায় যখন পরিবার, প্রথা আর কুসংস্কারের বেড়াজাল ছিল প্রবল, তখন সালমানের চরিত্রগুলো একরকম বিদ্রোহ করেই প্রেমকে জয়ী করত। এই বিদ্রোহী প্রেমই তাকে আলাদা করে তুলেছিল।
আজও তার সিনেমার গান বাজে বিয়ের আসরে, তরুণরা গুনগুন করে তার ছবির সংলাপ। তার মৃত্যুর এত বছর পরও, প্রেম নিয়ে নির্মিত ছবি মানেই প্রথমে মনে পড়ে সালমান শাহর নাম।
সালমান শাহ প্রমাণ করেছিলেন—প্রেমের গল্পও দর্শকের হৃদয়ে ঝড় তুলতে পারে, যদি নায়ক হন হৃদয়কাড়া, বাস্তব আর সাহসী। তার সিনেমার প্রেম ছিল নব্বইয়ের বিপ্লব, যা আজও বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে আছে।