‘জুলাই মঞ্চ’-এর ব্যানারে রাজধানীতে পোস্টার লাগানো হয়েছে ৪৪ জন আমলার অপসারণের দাবিতে। ঈদের ছুটির কারণে স্থগিত আছে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন। এরই মাঝে রোববার রাতে এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সচিবালয় ঘিরে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার থেকে সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মোঃ সাজ্জাত আলী গত ৪ জুন গণবিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করলেও তা প্রকাশ করা হয়েছে রোববার রাতে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এতদ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, জনশৃঙ্খলা এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬) এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আগামী ৯ জুন ২০২৫ খ্রি., সোমবার হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড়, অফিসার্স ক্লাব মোড়, মিন্টু রোড) যে কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’
সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে এর আগেও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। এ অবস্থায় সরকারি ছুটি চলাকালে ডিএমপির নতুন এ বার্তা জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
এদিকে ঈদের ছুটির মাঝেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে সরকারের ৪৪ জন আমলার অপসারণের দাবিতে রহস্যজনক পোস্টার। যার বেশিরভাগ সাঁটানো হয়েছে রাজধানীর তোপখানা রোড, সচিবালয়ের আশপাশ, সেগুনবাগিচা, মেট্রেরেলের পিলারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দেয়ালে দেয়ালে। মূলত ‘জুলাই মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে পোস্টারিং করা হয়েছে। একইভাবে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে একই স্থানগুলোতে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে সরকারের পাঁচ জন সচিব ও তিনটি অধিদফতরের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার ছবি সম্বলিত পোস্টারিং করা হয়েছিল। ‘গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদ কায়েমের সহযোগী আমলাদের অপসারণ চাই’ শিরোনামে এই পোস্টারিং করা হয়।
রহস্যজনক এসব পোস্টারে ব্যাপারে স্বীকৃত কোনও সংগঠন অথবা ব্যক্তি দায় স্বীকার করেনি। পুলিশ ও গোয়েন্দারা এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি।
পোস্টারে যেসব আমলাদের ছবি দিয়ে অপসারণের দাবি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, ভুমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহম্মদ ইব্রাহিম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মুসফিকুর রহমান, অর্থ বিভাগের সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রুহুল আমিন, দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সচিব আমিন উল আহসান, বিপিএটিসির রেক্টর সাঈদ মাহবুব খান, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোকাব্বির হোসেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাঈদুর রহমান, জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর ড. মুহম্মদ সহিদ উল্লাহ, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস একাডেমির রেক্টর ড. মো. ওমর ফারুকসহ অনেকে।
তালিকায় থাকা ৪৪ আমলার অনেকেই পরিস্থিতি ও প্রচারণা দেখে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছেন। তবে তারা এ বিষয়ে পরিচয় প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা সকলেই সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে জানান।