ন্যাটো দেশগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে “সর্বাধুনিক অস্ত্র” সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে, ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা দেশগুলোর ওপরও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওয়াশিংটনে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই ইউক্রেন যা করতে চায়, তা যেন করতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট পাঠাবে, আর যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো প্রতিস্থাপনে সহায়তা করবে।’
রুটে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় সবকিছু ব্যাপকভাবে সরবরাহ করা হবে ন্যাটোর মাধ্যমে। এর ব্যয়ভার বহন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।’
যদিও ট্রাম্প বা রুটে কেউই পাঠানো অস্ত্রের নির্দিষ্ট তালিকা দেননি। তবে রুটে জানান, সরবরাহে ‘মিসাইল ও গোলাবারুদ’ থাকবে। ট্রাম্প বলেন, “বিলিয়ন ডলারের” সর্বাধুনিক অস্ত্র দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে।
এ সময় রুটে বলেন, ‘যদি আমি আজ ভ্লাদিমির পুতিন হতাম, ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনাকে আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে ভাবতাম।’ পাশে থাকা ট্রাম্প তখন সম্মতির ভঙ্গি করেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরে এক্স-এ (পূর্বে টুইটার) জানান, রুটের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্পের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশের জন্য। আমরা হত্যা থামাতে এবং ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও জানান, ‘আমরা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি কীভাবে রাশিয়ার হামলা থেকে আমাদের জনগণকে আরও ভালোভাবে সুরক্ষা দেওয়া যায় এবং আমাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান শক্তিশালী করা যায়।’
রাশিয়ার বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি
ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিচুক্তি না হলে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
এই শুল্কের আওতায় কোনো দেশ যদি রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যায় এবং সেই দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠানো হয়, তাহলে আমদানিতে দ্বিগুণ হারে শুল্ক দিতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, যদি ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যায়, তাহলে আমেরিকান কোম্পানিগুলোকে ভারতীয় পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এতে ভারতীয় পণ্যের দাম এত বেড়ে যাবে যে মার্কিন ব্যবসায়ীরা সেগুলোর বদলে অন্য দেশ থেকে সস্তা পণ্য কিনবে, যার ফলে ভারতের রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লাগবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এই শুল্কের মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করা সম্ভব হবে। কারণ, রাশিয়ার মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ এবং সরকারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আয় আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি থেকে।
তবে ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরও মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হয়। বিশ্লেষকদের ধারণা, আগের সপ্তাহে ট্রাম্প যেভাবে “রাশিয়া বিষয়ে বড় ঘোষণা”র ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তার তুলনায় সোমবারের পদক্ষেপ তুলনামূলক কম কড়াকড়ি হওয়ায় বাজারে স্বস্তি আসে।
হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম সামরিক সহায়তার অঙ্গীকার
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ইউক্রেন বিষয়ে তার প্রথম বড় সামরিক সহায়তার অঙ্গীকার। একইসঙ্গে, তার বক্তব্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ঘিরে আগের চেয়ে অনেক কঠোরতা লক্ষ করা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ভাষা এবং অবস্থান সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনপন্থী হয়ে উঠছে। যা যুদ্ধ বন্ধে এক নতুন কূটনৈতিক চাপে পরিণত হতে পারে মস্কোর জন্য।