বাংলাদেশ-ভারত ‘শীতল সম্পর্কে’ পেট্রাপোলে বাণিজ্যে ধস

4 Min Read
ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে তৈরি পোশাকের চালান। ছবি: ইউএনবি
Highlights
  • স্বাভাবিক সময়ে একজন শ্রমিক দিনে গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা (রুপি) আয় করতেন, এখন কাজ না থাকায় অনেকে ১০০-২০০ টাকার বেশি রোজগার করতে পারছেন না

৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এ শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তার ভারতে আশ্রয় নেওয়া পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘শীতল’ সম্পর্ক বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়েছে দু’দেশের বাণিজ্যে। কমেছে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যের আমদানি-রপ্তানি। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের কর্মজীবী মানুষের রুজি-রোজগারে। তবে সব থেকে বিপাকে ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দরের পণ্য ওঠানো-নামানোর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা।

এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘আনন্দবাজার’।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাসে দেশের (ভারত) বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পণ্য আমদানি-রপ্তানি অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। এর ফলে ট্রাকে পণ্য ওঠানো-নামানোর সঙ্গে যুক্ত এক হাজারের বেশি শ্রমিক রুজি-রোজগার হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠন একত্রে বৈঠক করেছে।

সুসংহত চেকপোস্ট চত্বরে প্রায় এক হাজার শ্রমিক এ বৈঠকে অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী।

তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত বনগাঁ ট্রাক লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক রামপদ বিশ্বাস বলেন, ‘বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য বাণিজ্যের কাজ দ্রুত স্বাভাবিক করতে হবে। প্রথমে আমরা ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া, বিএসএফ, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, পুরপ্রধান, শুল্ক দফতর এবং ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের কাছে চিঠি দিয়ে আবেদন করব। তাতেও সমাধান না হলে লাগাতার আন্দোলনে নামতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। শ্রমিকদের রুজি-রোজগার প্রায় নেই, অথচ কেন্দ্রের কোনো নজর নেই।’

শ্রমিকরা জানান, পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের বড় অংশ তৈরি পোশাক, কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্য। এখন স্থলবন্দর দিয়ে এই পণ্যগুলোর আমদানি বন্ধ রেখে সমুদ্রবন্দর দিয়ে তা চালানো হচ্ছে।

শ্রমিকদের দাবি, যদি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করত, তাহলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের পেছনে বহুজাতিক সংস্থার মুনাফার বিষয় থাকতে পারে।

স্বাভাবিক সময়ে একজন শ্রমিক দিনে গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা (রুপি) আয় করতেন, এখন কাজ না থাকায় অনেকে ১০০-২০০ টাকার বেশি রোজগার করতে পারছেন না।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন ২৭৭টি ট্রাকে রফতানি এবং ৬৭টি ট্রাকে আমদানি হয়েছে; ২৪ জুন রফতানি হয়েছে ৩১৯ ট্রাক, আমদানি ৭৬ ট্রাক; ২৩ জুন রফতানি হয়েছে ২৭৭ ট্রাক, আমদানি ৬৭ ট্রাক। অথচ স্বাভাবিক সময়ে রফতানি হত ৪৫০–৫০০ ট্রাক, আর আমদানি ১৫০–২০০ ট্রাক। কাঁচাপাটসহ পাটজাত পণ্যের আমদানি বন্ধের কারণে এই সংখ্যা আরও কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘পণ্য বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্তই নিক, তা আঞ্চলিক অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা বিবেচনা করে পদক্ষেপ করা উচিত।’

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তার ভারতে আশ্রয় নেওয়া ঘিরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেকটা ‘শীতল’ সম্পর্ক বিরাজ করছে। যদিও দুই দেশের কূটনৈতিক মহল থেকে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক থাকার দাবি করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষিতে অঘোষিত একটি ‘ভিসা রেস্ট্রিকশন’ ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে ভারত। আবার নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে দিয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

২৮ জুন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, বিশেষ ধরনের কাপড়সহ ৯ ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এরপর থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কমে যায়।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *