টুর্নামেন্টের নাম সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ।সাফের বয়সভিত্তিক এসব টুর্নামেন্ট কাজ করে আগামীর তারকাদের পারফরম্যান্সের মঞ্চ হিসেবে। অথচ বুধবার ঘোষিত ২৩ সদস্যের বাংলাদেশ দলে দেখা গেল জাতীয় দলের ৯ নারী ফুটবলারের নাম। তাই সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠল, আগামী ১১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টের স্কোয়াডে কেন জাতীয় দলের ফুটবলারদের রাখা হয়েছে।
এসব প্রশ্নের জবাব দিতে বাফুফে ভবনের তৃতীয় তলার সংবাদ সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন কোচ পিটার বাটলার, নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ও অধিনায়ক আফিদা খন্দকার।
টুর্নামেন্টে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ থাকার পরেও কেন স্কোয়াডে সিনিয়র ফুটবলার রাখা হলো, এই প্রশ্নের জবাবে কোচ বাটলার বলেন, ‘সাফের নিয়মই আমাদের এই সুযোগ দেয়। যেহেতু আমরা এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছি, এখন মূল লক্ষ্য দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের নিয়মিত ম্যাচের মধ্যে রাখা। সেই ভাবনা থেকেই এই স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে।‘
আসন্ন এই টুর্নামেন্টে নেই ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। যাদের বিপক্ষে এই টুর্নামেন্টের গত আসরের ফাইনালে টাইব্রেকারে সাডেন ডেথের পরেও আসেনি কোনো ফলাফল। শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্তের বাইলজ অনুযায়ী যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় দুই দলকে। ভারত না থাকায় টুর্নামেন্টের নাম কমেছে বলে মানতে রাজি নন অধিনায়ক আফিদা।
বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূলপর্বের টিকেট এনে দেয়ার যাত্রায় নেতৃত্ব দেয়া এই ডিফেন্ডার বলেন, ‘প্রফেশনাল ফুটবলে লক্ষ্য থাকে সবসময়ই জয়ের। আমরা এশিয়ান কাপে যেমন জয়ের মানসিকতা নিয়ে নেমেছিলাম, এখানেও তা-ই করবো।‘
জাতীয় দল থেকে অনূর্ধ্ব-২০ দলে মানিয়ে নিতেও খুব বেশি সমস্যা হয়নি জানিয়ে আফিদা আরো বলেন, ‘মিয়ানমারে যাওয়ার আগে আমরা সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব-২০ দল একসাথে প্র্যাকটিস করেছি। তাই মানিয়ে নিতে তেমন সমস্যা হয়নি।‘
নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা ও স্বাগতিক বাংলাদেশকে নিয়ে রাউন্ড রবিন ফরম্যাটের আসন্ন টুর্নামেন্টে দলের লক্ষ্য সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে আফিদার সোজা জবাব, প্রতি ম্যাচই জিততে চান তারা।
২০২৩ সালে সাফজয়ী দলের অংশ ছিলেন আফিদা। সেই দলের সঙ্গে এবারের দলের তুলনা নিয়ে বলেন, ‘আগের দলে রুপনা আপু, শামসুন্নাহার জুনিয়র আপুরা ছিলেন, এবার আমরা আছি। দুটো দলই আমার কাছে সমান ভালো।‘
জাতীয় দলের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক দল পরিচালনার ক্ষেত্রেও কোচ পিটারের ভূমিকা প্রসঙ্গে কথা বলেন মহিলা কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তিনি বলেন, ‘আমরা এভাবে কাজ করতে অভ্যস্ত। পিটার সবকিছু দেখছেন, এটা আমরা চাই। যখন সিনিয়রদের ম্যাচ থাকবে তিনি ওখানে থাকবেন, আবার বয়সভিত্তিক দলের সময় সেখানেও যাবেন। স্থানীয় কোচরা তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করেন।‘
এশিয়ার পরিসরে পৌঁছানোর পরেও একক কোচের অধীনে সব কার্যক্রম রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কিরণ বলেন, ‘আমি মনে করি একটিমাত্র ‘বটগাছের’ ছায়াতেই সবকিছু সহজভাবে চলে। পিটার ফ্রেম তৈরি করেন, এবং সব পর্যায়ের কাজ সেই অনুযায়ীই চলে।‘
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে কিরণ জানান, ‘আমরা আগে চীন, কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। সেখান থেকে এসে সাফ জিতেছি। এবারও আমরা চাই সেই লেভেলে গিয়ে প্রস্তুতি নিতে। আমাদের হাতে প্রায় সাত মাস আছে, সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই। বাফুফে প্রেসিডেন্ট তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে আমি এ বিষয়ে কথা বলবো।‘
এই বক্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট, মেয়েদের ফুটবলে পরিকল্পিতভাবেই এগোতে চায় বাফুফে। সিনিয়র-জুনিয়র একসঙ্গে খেলিয়ে যেমন অভিজ্ঞতা বাড়ানো হচ্ছে, তেমনি প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও প্রস্তুতিকে নেওয়া হচ্ছে গুরুত্বের সঙ্গে। মাঠে সেই ছাপ ফেলে পারলেই আফিদাদের সামনে খুলে যেতে পারে আরও বড় দরজা।