প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড

টাইমস রিপোর্ট
3 Min Read

বাংলাদেশ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করছে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বার্ষিক প্রবাসী আয়ের রেকর্ড, যা ২০২০–২১ অর্থবছরে অর্জিত ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের আগের সর্বোচ্চ অঙ্ককে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরে মোট প্রবাসী আয় ছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার।

বছরের শেষ প্রান্তিকে শক্তিশালী প্রবাসী আয় প্রবাহের কারণে এই উল্লম্ফন ঘটে। মার্চ মাসে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারে, যা মাসিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ। এরপর এপ্রিল মাসে ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন এবং মে মাসে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার আসে। শুধুমাত্র মে মাসের প্রবাসী আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি।

ব্যাংকার এবং নীতিনির্ধারকরা এই প্রবৃদ্ধির কৃতিত্ব দিচ্ছেন সরকারি নীতি সহায়তা, উন্নত নজরদারি এবং অবৈধ চ্যানেলের বিরুদ্ধে দমন অভিযানের সমন্বিত উদ্যোগকে। বৈধ প্রবাসী আয়ের জন্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি প্রণোদনা এবং হুন্ডির মতো অবৈধ টাকা পাঠানোর পদ্ধতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা আসা বেড়েছে।

প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের ওপর চাপ কমাতে সহায়তা করেছে, যার ফলে কয়েক মাসের অস্থিরতার পর টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে। আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুযায়ী, যেখানে বাধাগ্রস্ত রিজার্ভ বাদ দেওয়া হয়, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভ বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ বিতরণও সহায়ক হয়েছে। প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধির সঙ্গে এই বিদেশি ঋণ প্রবাহ আমদানি ব্যয় মেটানো এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে স্বস্তি নিয়ে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা এই রেকর্ডকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন, বিশেষত বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এবং সঙ্কুচিত চলতি হিসাব ঘাটতির প্রেক্ষাপটে। তবে তারা সতর্ক করছেন, এই গতি বজায় রাখতে হলে ডিজিটাল প্রবাসী আয়ের অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং প্রণোদনা যথাসময়ে বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমানে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে কাজ করছেন, এবং তাদের প্রেরিত অর্থ দেশের পারিবারিক ভোগব্যয়, সামাজিক উন্নয়ন এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভবিষ্যতের প্রবাহ টিকিয়ে রাখতে শ্রম কূটনীতি জোরদার করা, বৈচিত্র্যময় গন্তব্য দেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ এবং অর্থ প্রেরণের পদ্ধতি সহজ করা জরুরি।

যদি বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৫–২৬ অর্থবছরেও প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড গড়তে পারে, যা এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী অর্থনৈতিক রূপান্তরের সময় বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষা বেষ্টনী হিসেবে কাজ করবে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *