পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফিরতি যাত্রায় বাস-ট্রেন-লঞ্চে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। ঢাকার প্রবেশ মুখের টার্মিনাল গুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ফিরতি যাত্রায় স্বস্তি থাকলেও অধিকাংশদের মুখে ছিল না মাস্ক।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা থাকলেও এ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই বলতে গেলেই চলে।
বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বেসরকারি অফিসের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় শুরু হয়েছে কর্মব্যস্ততা। সেই সঙ্গে বেড়েছে কর্মজীবী মানুষের ঢাকায় ফেরার তাড়া। সরকারি হিসাবে অবশ্য ঈদের ছুটি চলবে আরও তিন দিন।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা ছাড়ার যাত্রীও কমে গেছে। ৫ থেকে ১০ জন যাত্রী পেলেই বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে ফিরতি যাত্রী আনার জন্য।
উত্তরবঙ্গের ন্যাশনাল পরিবহনের সেলসম্যান রাকিবুল ইসলাম বলেন, যাওয়ার সময় এখন কোনো গাড়িতে পাঁচজন, কোনোটিতে দশ জন; আবার কোনো কোচে অর্ধেক যাত্রী যাচ্ছেন। আসার সময় কোচ বোঝাই হয়ে যাত্রী ঢাকায় ফিরছেন। এখন ঢাকার বাইরে বাসগুলো যাচ্ছে মূলত ঈদের ফিরতি যাত্রী আনতে।
টেকনিক্যাল মোড়ে কথা হয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদের সঙ্গে। তিনি টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, বগুড়ায় বাবা-মা আত্মীয়দের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেত গিয়েছিলাম।পড়াশোনা ঢাকাতে, তাই ফিরে আসতে হলো।
এসবি পরিবহনের সেলসম্যান কাজী মারুফ বলেন, কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসার সময় কোচ লোড হয়ে আসছে। কিন্তু যাওয়ার সময় যাত্রী সংখ্যা কম, ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী যাচ্ছে।
রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া ও চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা হানিফ পরিবহনের কোচগুলোও ভর্তি হয়ে আসছে।
পরিবহনটির কাউন্টার মাস্টার আবদুল আওয়াল জানান, ঢাকা আসতে হানিফের ১৭ তারিখ পর্যন্ত সব টিকিট বুক হয়ে আছে। আজকালের মধ্যে আরও ৫ থেকে ৬ দিনের টিকিট বুক হবে। পুরো জুন মাস ঈদ ফেরত মানুষের চাপ থাকবে।
ঈদ উদযাপন শেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা এসেছেন ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম। তিনি টাইমস অব বাংলাদেশকে বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আজ পরিবারসহ ঢাকায় ফিরেছি। বিকালে ব্যবসার কাজে অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করবো।

ট্রেনে ফেরা মানুষ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি
দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব যাত্রী মাস্কবিহীন। ট্রেনের এসি-নন এসি বগিতে গাদাগাদি করে ঢাকায় আসছেন মানুষ, স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীরাও রয়েছেন। এসি-চেয়ার (স্নিগ্ধা) বগিতেও বিনা টিকিট এবং স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের ভিড়। তাদের কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।
চাটমোহর থেকে ঢাকায় ফেরা মারুফ হোসেন বলেন, ভাবছিলাম যাওয়ার সময় যেমন ভোগান্তি হয়েছিল, ফেরার সময় হয়তো তেমনটা হবে না। কিন্তু গাদাগাদি করেই ফিরতে হলো। করোনা বাড়ছে, তারপরও অধিকাংশরাই স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা করছেন না।
কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, যাত্রীদের বলছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু জানি না। এটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
লঞ্চে গাদাগাদি করে ফিরছে মানুষ
লঞ্চে গাদাগাদি করে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ছুটি বাকি থাকলেও একটু স্বস্তির আশায় আগেভাগেই ফিরছেন তারা।
এসময় কথা হয় ভোলা থেকে আসা আহসান কামরুলের সঙ্গে। তিনি জানাচ্ছিলেন আগে ভাগে ফিরে আসার কারণ। বলেন, ছুটি এখনও তিন দিন বাকি আছে। কিন্তু এখন ঢাকায় ফিরলে কিছুটা স্বস্তির সঙ্গে আসা যায়। ফাঁকা ঢাকা কিছুটা ঘুরে দেখার ইচ্ছের কথা জানান তিনি।
উড়োজাহাজেও ফিরছে মানুষ
বাংলাদেশ বিমান জানিয়েছে, বিশেষ ফ্লাইট চালু না থাকলেও স্বাভাবিক ফ্লাইট চালু রয়েছে। রাজশাহী, সৈয়দপুর, কক্সবাজার, চট্রগ্রাম ও সিলেটে স্বাভাবিক ফ্লাইট চালু রয়েছে। যারা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন তারা ফিরতে শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা রওশন কবীর বলেন, স্বাভাবিক ফ্লাইটেই যাত্রী পরিবহন চলছে। অনেকেই প্রয়োজনে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন। আবার যারা ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়েছেন তারাও ফিরছেন।
এদিকে অন্যান্য এয়ারলাইন্স গুলো যেমন ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঈদের মধ্যে বিশেষ ফ্লাইট না দিলেও স্বাভাবিক ফ্লাইট ছিল। বর্তমানেও তা অব্যাহত রয়েছে। নভোএয়ারের পক্ষ থেকেও এমনটা জানানো হয়েছে।