চার বছর বন্ধ পাইওনিয়ার লিগ, আন্দোলনে ক্ষুদে ফুটবলাররা

টাইমস স্পোর্টস
4 Min Read
বাফুফের সামনে আন্দোলনরত ক্ষুদে ফুটবলাররা। ছবি: টাইমস

চার বছর ধরে বন্ধ দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ। আর এতে করে হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন, নিভে যাচ্ছে ক্ষুদে ফুটবল তারকা হওয়ার আশা। মাঠে খেলার সুযোগ না পেয়ে অনেক তরুণ জড়িয়ে পড়ছে বিপথে কেউ কিশোর গ্যাংয়ে, কেউ বা মাদকে। অথচ দায়িত্বশীলদের যেন কোনো ভাবনা নেই।

পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ যা কি না বাংলাদেশের ক্ষুদে ফুটবলার তৈরির কারখানা হিসেবে পরিচিত, সেই লিগ আজ বাংলাদেশের ফুটবল থেকে হারিয়ে যাবার পথে। ২০২২ সালের পর থেকে আয়োজনের মুখ দেখে নি আর এই পাইওনিয়ার লিগ। যে লিগ থেকে উঠে এসেছেন মোহাম্মদ মোনেম মুন্না, মোহাম্মদ আলফাজ আহমেদ, তপু বর্মন সহ অনেক ইতিহাস গড়া খেলোয়াড় সেই লিগকে হারিয়ে যেতে দিতে চান না বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার সপ্ন দেখা ক্ষুদে ফুটবলাররা। এর জের ধরে আজ (বুধবার) বাফুফে ভবনের সামনে আন্দোলনে আসের পাইওনিয়ার লিগে খেলতে ইচ্ছুক এমন ক্ষুদে ফুটবলার এবং ক্লাব কতৃপক্ষ।

পাইওনিয়ার লিগ বাংলাদেশের অন্যতম বড় ও ষষ্ঠ স্তরের লিগ হিসেবে পরিচিত। এই টুর্নামেন্টে ৮০ টি দল অংশ নেয় এবং এখান থেকেই সেমিফাইনাল খেলা দলগুলো ঢাকা তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগে উন্নীত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮১ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ তৈরির কারখানা হিসেবে খুব দ্রতই নিজের খ্যাতি অর্জন করে নেয়। এই পরিস্থিতি বদলানোর দাবিতে বুধবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের সামনেই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন পাইওনিয়ার লিগ সংশ্লিষ্ট একাডেমির কর্মকর্তারা। দাবি একটাই পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ দ্রুত চালু করতে হবে।

বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মোনেম মুন্না থেকে শুরু করে বর্তমান কাপ্তান তপু বর্মনের মত অনেক খেলোয়াড়কে জাতীয় দলের রাস্তা চিনিয়েছে এই পাইওনিয়ার লিগ। তরুণ প্রজন্ম থেকেও এই মাপের খেলোয়াড় বের করতে পাইওনিয়ার লিগের বিকল্প নেই। বাফুফের সামনে আজকের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গাজী সেলিম ফুটবল একাডেমির কর্ণধার গাজী সেলিম, লাইজু কিডস ফুটবল একাডেমির সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন, প্রভাতী ফুটবল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, পদ্মা মোহামেডান স্পোর্টস একাডেমির শাহরিয়ার আহমেদসহ একাধিক জেলার ফুটবল সংগঠকরা।

গাজী সেলিম বলেন, ‘দ্রুত এই লিগ চালু করার জন্য আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি। যদি তা না করা হয়, তাহলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলবো। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই এই দাবিতে মাঠে নামবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পাইওনিয়ার লিগ থেকেই উঠে এসেছেন আসলাম, সাব্বির, এমিলি, মোনেম মুন্নার মতো তারকারা। অথচ চার বছর ধরে লিগ না থাকায় প্রায় বিশ হাজার ক্ষুদে খেলোয়াড় হারিয়েছে স্বপ্ন দেখার সুযোগ।’

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা ২০২১-২২ সালে শেষবার এই লিগে অংশ নিয়েছেন। তারপর প্রতি বছর আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি কিছুই। লিগ কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী টিপু সুলতান ১০ দিন আগে এক সভায় সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বললেও এখনো কোনো ঘোষণা আসেনি।

লাইজু কিডস ফুটবল একাডেমির সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘অনেক বাচ্চা যারা রেজিস্ট্রেশন করেছে, তারা এখন বয়সসীমা পেরিয়ে গেছে। তাদের স্বপ্নগুলো আর ফেরত আসবে না। একেকটা খেলোয়াড় মানে একেকটা সম্ভাবনা। চার বছরে এসব সম্ভাবনা নষ্ট হয়েছে দায়িত্বহীনতায়।’

২০২৪ সালের বাফুফে নির্বাচনের পর পাইওনিয়ার লিগ কমিটির দায়িত্ব পেয়েছেন হাজী টিপু সুলতান। জানা গেছে, তিনি লিগ ফের চালুর বিষয়ে চেষ্টা করছেন। তবে মাঠে কবে গড়াবে বলটি, সেটি নিয়ে নেই কোনো পরিষ্কার ঘোষণা।

এই প্রতিবাদ থেকেই একটা বিষয় স্পষ্ট, মাঠের খেলায় সুযোগ না পেলে মাঠেই নামবেন ফুটবলার ও সংগঠকরা। তারা চান না, আরেকটি প্রজন্ম হারিয়ে যাক পাইওনিয়ার লিগ বন্ধ থাকার কারণে।

Share This Article