নোয়াখালীর চাটখিলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে গুলিবিদ্ধ হন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ। পরদিন হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ঘটনার ৯ মাস পর গত বুধবার হত্যা মামলা দায়েরের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন রিয়াজের পিতা হাবিবুর রহমান। আদালত বিষয়টি যাচাইয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। দীর্ঘসময় পর এ হত্যা মামলা দায়েরের প্রচেষ্টা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সেগুলোও যাচাই করছে স্থানীয় প্রশাসন।
মামলার বাদীর আইনজীবি সাফায়েত উল্যাহ কবির জানান, ‘ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজকে হত্যার অভিযোগে মামলার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আমলি আদালত-৭-এর বিচারক এ আবেদন গ্রহণ করেছেন। মামলায় সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ উল্যা, সাবেক মেয়র ভিপি নিজাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হুদা শাকিল, বেলায়েত হোসেন, শাহজাহান বাবুল, বজলুর রহমান লিটন, রাজিব হোসেন রাজু, আলী তাহের ইভুসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।’
এদিকে ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিনে মামলা না করার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বিস্মিত এ ঘটনায়।
তারা জানান, চাটখিল থানা থেকে লুট করা শর্টগানের গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করার সময় ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ গুলিবিদ্ধ হন বলে সে সময় জানা যায়। তার মরদেহ সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়নি। এ নিয়ে তখন প্রশ্ন তোলা হয়নি।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জুলাই আন্দোলনের নামে মিথ্যা মামলা দায়েরের নজির থাকায় পুলিশ বর্তমানে সতর্ক। তারা যাচাই-বাছাই ছাড়া এজাহার নিতে চাচ্ছে না। চাটখিলে ৯ মাস পর হত্যা মামলা দায়েরের এ ঘটনাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলেই মনে করছে পুলিশ।
জুলাই শহীদের তালিকায় নাম থাকলে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে, এমন তথ্য পেয়েই মূলত মামলার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে মনে করছেন অনেকে। গত ২৭ মার্চ ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজকে শহীদের স্বীকৃতি ও ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র দেওয়ায় একটি সংবাদ প্রচার হলে সমালোচনা শুরু হয়। তার নাম গেজেটভুক্ত শহীদের তালিকা থেকে বাদ দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চাটখিল উপজেলার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ‘একজন আত্মঘাতী ব্যক্তি শহীদ হিসেবে কীভাবে গেজেটভুক্ত হয়। জেলা প্রশাসক কিভাবে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র তুলে দেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম কোথাও ছিল না।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘জুলাইয়ের আহত যোদ্ধারা এখনো অনেকে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অথচ অনেকে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইমতিয়াজের পরিবার জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে আমরা জেনেছি। ঘটনা কীভাবে এতদূর গড়িয়েছে তা তদন্ত করা দরকার।’

ইমতিয়াজের পিতা হাবিবুর রহমান দাবি করেছেন, ‘এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। ইমতিয়াজ হোসেনকে গণঅভ্যুত্থানের শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রকাশিত গেজেটে ২০ নম্বর ক্রমিকে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
প্রতিবেশী আরমান হোসেন বলেন, ‘আমরা শুনেছি থানার লুট করা অস্ত্রের গুলিতে সে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছে। এখন তার পরিবার দাবি করছে তাকে হত্যা করেছে এমপির লোকজন।’
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গেজেট নিয়ে আপত্তি থাকায় আমরা ইমতিয়াজের বিষয়টি তদন্ত করছি। তার পরিবারের সব সুযোগ সুবিধা আপাতত বন্ধ আছে। জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা তাকে ছাড়া বাকি সবাইকে দেয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে আদালতের আদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের কাছে মামলা নিতে নির্দেশনা এখনো আসেনি।’