ইন্টারপোলের রেড নোটিশ: হাসিনা ও অন্যদের জন্য এর তাৎপর্য কী?

admin
By admin
4 Min Read

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আরও কয়েকজন পলাতক রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারির অনুরোধের বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্টারপোলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে—এই নোটিশ আদতে কী, এবং এটি বিদেশে গ্রেপ্তার বা প্রত্যার্পণের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম নিশ্চিত করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে জাতীয় কেন্দ্রীয় ব্যুরো ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশের আবেদন করেছে। ট্রাইব্যুনালটি জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে।

তবে আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হলেও তা গ্রেপ্তার বা প্রত্যার্পণের কোনো নিশ্চয়তা দেয় না। এটি মূলত একটি সতর্কবার্তা, যা কোনো ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে অস্থায়ীভাবে আটক করার জন্য ইন্টারপোল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অনুরোধ জানায়, যাতে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়া চালানো যায়। এটি জারি করা হয় একটি বৈধ জাতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ওপর ভিত্তি করে।

তবে এটি কোনো আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। ইন্টারপোল সদস্য রাষ্ট্রগুলো আইনগতভাবে বাধ্য নয় এই নোটিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে। কার্যকর হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরীণ আইন এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।

তাহলে প্রশ্ন আসে—শেখ হাসিনা কি বিদেশে গ্রেপ্তার হতে পারেন?

এটি সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবে তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন, সেই দেশের আইন ও রাজনৈতিক বিবেচনার ওপর। যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যেখানে হাইপ্রোফাইল রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রায়ই অবস্থান করেন, তারা সাধারণত যাচাই করে দেখে অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজ দেশে ফেরত গেলে তিনি নির্যাতনের শিকার হতে পারেন কি না।

এই ধরনের উদ্বেগ থাকলে, রেড নোটিশ জারি হলেও গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা কম।

বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যার্পণ চুক্তির আওতায় উভয় দেশ সন্ত্রাসবাদ, হত্যা, আর্থিক অপরাধসহ বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত বা দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রত্যার্পণ করতে পারে। এই চুক্তিটি বিচারপূর্ব ও দণ্ডাদেশ-পরবর্তী উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

তবে একই চুক্তিতে একটি ধারা রয়েছে, যা অনুযায়ী কোনো রাষ্ট্র যদি মনে করে যে অভিযোগটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অথবা অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশে ফেরত গেলে নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে প্রত্যার্পণ অস্বীকার করা যায়।

সেক্ষেত্রে, ভারত চাইলে এই ধারা ব্যবহার করে— ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করলেও—শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

রেড নোটিশ থাকা সত্ত্বেও প্রত্যার্পণ একটি আলাদা আইনি প্রক্রিয়া। এর জন্য প্রায় সবক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিক প্রত্যার্পণ চুক্তি প্রয়োজন হয়। অনেক পশ্চিমা দেশ যেখানে কিছু পলাতক ব্যক্তি আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হয়, তাদের সাথে বাংলাদেশের এরকম চুক্তি নেই।

যেসব দেশের সাথে প্রত্যার্পণ চুক্তি আছে, সেখানেও অনুরোধগুলো আদালতের বিচারাধীন হয়। বিচারকেরা খতিয়ে দেখেন অভিযোগের আইনি ভিত্তি, বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, এবং মামলাটি রাজনৈতিক কি না। শেখ হাসিনার মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

তাহলে রেড নোটিশ জারি হলে আদতে কী অর্জিত হবে?

রেড নোটিশ একটি আন্তর্জাতিক বার্তা, যা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময় ও নজরদারির মাধ্যমে একটি কূটনৈতিক ও আইনি চাপ তৈরি করে। এটি অভিযুক্তকে আন্তর্জাতিক নজরদারির তালিকায় রাখে, চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করে এবং বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশ যে বিচার চায়—সে বার্তা দেয়।

তবে যতক্ষণ না এটি দ্বিপাক্ষিক আইনগত সহযোগিতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সহায়তায় শক্তভাবে সমর্থিত হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি কেবল প্রতীকী উদ্যোগ হিসেবেই থেকে যেতে পারে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *